জঙ্গি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের মেসগুলোয়।
কোন মেসে কারা কি পরিচয়ে উঠছেন তা খতিয়ে দেখছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে মালিকদের প্রতি মেস ভাড়াটিয়াদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে মেসে অবস্থানকারীদের পরিবারের সদস্যদের কারও ‘রেফারেন্স’ সংগ্রহ করে পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে বলা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে পুলিশ সদর দফতর থেকে ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন ইউনিট প্রধানদের কাছে এরকম একটি লিখিত নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (গোপনীয়) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, জঙ্গিদের অবস্থান শনাক্ত ও ধরতে সারা দেশেই গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে। মেসগুলোতে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। অপরিচিত কেউ কোনও মেসে উঠলেই তার সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ-খবর নিতে বলা হয়েছে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র জানায়, জঙ্গিরা বিভিন্ন সময়ে ছদ্মবেশে অবস্থান করে থাকে। এমনকি বিভিন্ন পেশায় যোগদান করে নিজেদের আসল পরিচয় আড়াল করে আত্মগোপনে থেকে জঙ্গি কার্যক্রম চালিয়ে যায়। আগে ঘনবসতি ও নিম্নবিত্তরা থাকেন এমন এলাকায় জঙ্গিরা আত্মগোপনে থাকতো। কিন্তু বর্তমানে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ও উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানেরাও জঙ্গি কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হওয়ার পর তারা অভিজাত এলাকায় মেস বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাসা ভাড়া করে থাকছে। অনেক ক্ষেত্রে জঙ্গি সদস্যরা নারী সদস্যদের নিয়ে পরিবার বানিয়ে বাসা ভাড়া করে থাকছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় জঙ্গিদের যে আস্তানা পাওয়া গেছে সেখানে প্রথমে একটি পরিবার উঠেছিলো। পরবর্তীতে তাদের সঙ্গে গুলশান হামলায় অংশ নেওয়া জঙ্গিরা গিয়ে যোগ দেয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, রাজধানীর প্রতিটি এলাকার মেসের বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ-খবর করা হচ্ছে। প্রতিটি থানা এলাকার বিভিন্ন বিট পুলিশের দায়িত্বে থাকা এসআইদের এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা মেসে গিয়ে গিয়ে খোঁজ-খবর ও সন্দেহভাজনদের নজরদারি করবেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, মেস হিসেবে কোনও বাসা ভাড়া দিলেও সেই বাসায় নিয়মিত বাড়ির মালিককে পরিদর্শনসহ সব ধরনের খোঁজ-খবর রাখতে বলা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, জঙ্গি কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হয়ে যারা স্বেচ্ছায় ঘর ছেড়েছে, তাদের বেশিরভাগই দেশের ভেতরেই আত্মগোপনে রয়েছে। তাদের মেসে থাকা ছাড়া বিকল্প উপায় নেই। একারণে মেসগুলো সঠিকভাবে নজরদারি করতে পারলে জঙ্গি সদস্যদের অনেককেই ধরা যাবে। র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্ণেল আবুল কালাম আজাদ বলেন, জঙ্গিরা মেস হিসেবে ভাড়া নিয়ে আস্তানা গড়ে তুলছে। একারণে আমরা মেস বাসাগুলোতে বাড়তি নজরদারি করছি। বৃহস্পতিবার ভোরে টঙ্গি থেকে গ্রেফতার হওয়া চার জঙ্গি সদস্যও মেস ভাড়া নিয়ে জঙ্গি আস্তানা গড়ে তুলেছিলো বলে জানান তিনি।