দিব্য জ্যোতি সী :: সারি সারি নীল পাহাড়ের কোলে পাথর বিছানো বিস্তৃত এলাকায় জলের ছোটাছুটি। পাহাড়ের বুক চিরে বের হয়ে আসা ঠান্ডা পানির স্রোত, যা আপনাকে দুই হাত প্রসারিত করে আলিঙ্গন করবে সব সয়মই।
বলছি না বিছনাকান্দির কথা। এতদিনে বিছনাকান্দি হয়তো আপনাদের ঘুরে আসা হয়েছে অনেকবার। এবার ঘুরে আসতে পারেন বিছনাকান্দির চেয়েও সুন্দর নতুন আরেকটি পর্যটনকেন্দ্র। প্রকৃতির সৌন্দর্যে শোভিত অপরূপ এই লীলাভূমির নাম উতমাছড়া।
প্রকৃতির অসাধারণ রূপ-লাবণ্যে ঘেরা এই স্থানটি সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর রণিখাই ইউনিয়নে অবস্থিত। গরমের অস্বস্তি থেকে প্রকৃতির কোলে শান্তি পেতে চাইলে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন উতমাছড়া থেকে।
সিলেটের মানুষের কাছে জায়গাটি অপরিচিত হলেও এখানে আপনি পেতে পারেন প্রকৃতির মনোরম লাবণ্যের স্পর্শ। একে জীবন-যাপনের যাবতীয় ক্লান্তি বিসর্জনের জন্য চমৎকার যায়গা বললেও বরং কম হয়ে যায়।
এখানে পাথরে ভরা পুরো এলাকা। পানিতে বিছানো রয়েছে মোটা-শক্ত, ছোট-বড় অসংখ্য পাথর। সেসব পাথরের কোনোটাতে মোটা ঘাসের আস্তরণ। আবার কোনোটা বা ধবধবে সাদা।
কীভাবে যাবেন?
উতমাছড়ার এমন সৌন্দর্য বরষা চলে গেলে বা পানি কমে গেলে আর থাকে না। তখন এটা একটা মরূদ্যানের মতো লাগে। পাথর বহন করার জন্য এখানে চলে অজস্র ট্রাক আর ট্রাক্টর। সুতরাং অক্টোবর পর্যন্ত বিছনাকান্দি যাওয়ার মোক্ষম সময়। মন চাইলে এখনই চলে যেতে পারেন।
ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশে বাস ছেড়ে যায় গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে। বাসগুলো সকাল থেকে রাত ১২টা ৪৫ পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময় পরপর ছেড়ে যায়। ঢাকার ফকিরাপুল, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাসস্টেশন থেকে সিলেটের বাসগুলো ছাড়ে। এ পথে গ্রীন লাইন, সৌদিয়া, এস আলম, শ্যামলী ও এনা পরিবহনের এসি বাস চলাচল করে। ভাড়া ৮০০ থেকে এক হাজার ১০০ টাকা। এ ছাড়া শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, ইউনিক সার্ভিস, এনা পরিবহনের নন এসি বাস সিলেটে যায়। ভাড়া ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকা। এনা পরিবহনের বাসগুলো মহাখালী থেকে ছেড়ে টঙ্গী ঘোড়াশাল হয়ে সিলেট যায়।
ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস। সপ্তাহের প্রতিদিন দুপুর ২টায় ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এবং বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৪টায় ছাড়ে কালনী এক্সপ্রেস। ভাড়া দেড়শো থেকে এক হাজার ১৮ টাকা। এ ছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে যায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেস এবং শনিবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস। ভাড়া ১৪৫ থেকে এক হাজার ১৯১ টাকা। ট্রেনের টিকেটের দাম : এসি বার্থ ৬৯৮ টাকা, এসি সিট ৪৬০ টাকা, ফার্স্ট ক্লাস বার্থ ৪২৫ টাকা, ফার্স্ট ক্লাস সিট ২৭০ টাকা, স্নিগ্ধা ৪৬০ টাকা, শোভন চেয়ার ১৮০ টাকা, শোভন ১৫০ টাকা, সুলভ ৯৫ টাকা। ট্রেনে গেলে রাত ৯টা ৫০ মিনিটের উপবন এক্সপ্রেসে যাওয়াটাই সব থেকে ভালো কারণ আপনার যেতে যেতে সকাল হয়ে যাবে আর আপনি যদি রাতে ট্রেনে ঘুমিয়ে নিন তাহলে সকালে ট্রেন থেকে নেমেই আপনার ভ্রমণ শুরু করতে পারেন আর সময় লাগবে সাত-আট ঘণ্টা।
ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ, ইউনাইটেড এয়ার, রিজেন্ট এয়ার, নভো এয়ার এবং ইউএস বাংলা এয়ারের বিমান প্রতিদিন যায় সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরে।
সিলেটের আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে সরাসরি সিএনজিযোগে যাওয়া যায় দয়ারবাজারে। রাস্তার অবস্থা খারাপ হওয়ায় ৩৫ কিলোমিটার দূরের এই জায়গার ভাড়া জনপ্রতি ১৬০-১৮০ টাকা। আর দয়ারবাজার থেকে আবার সিএনজিযোগে আপনাকে যেতে হবে চড়ারবাজারে। এই আট কিলোমিটার রাস্তা যাওয়ার জন্য জনপ্রতি ভাড়া গুনতে হবে ২৫-৩০ টাকা। চড়ারবাজার থেকে হেঁটে উতমাছড়া মূল স্পটে যেতে সময় লাগবে ১০-১৫ মিনিট।
কোথায় থাকবেন?
সিলেট শহরে এখন অনেকগুলো উন্নতমানের হোটেল রয়েছে। বিছনাকান্দিতে দিনে গিয়ে দিনে ফেরা যায় সিলেট শহর থেকে। তাই সিলেট শহরেই থাকতে পারেন। শহরের নাইওরপুল এলাকায় হোটেল ফরচুন গার্ডেন। জেল সড়কে হোটেল ডালাস। ভিআইপি সড়কে হোটেল হিলটাউন। লিঙ্ক রোডে হোটেল গার্ডেন ইন। আম্বরখানায় হোটেল পলাশ। দরগা এলাকায় হোটেল দরগা গেট। হোটেল উর্মি। জিন্দাবাজারে হোটেল মুন লাইট। তালতলায় গুলশান সেন্টার ইত্যাদি। ভাড়া ৩০০ থেকে শুরু করে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত, নিরাপত্তাও ভালো আছে হোটেলগুলোতে, দরগা গেটে আরো কয়েকটি ভালো হোটেল আছে।