News Bangla 24 BD | আসছে বুলেট ট্রেন; দুই ঘণ্টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম
News Head

আসছে বুলেট ট্রেন; দুই ঘণ্টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম


দুই ঘণ্টায় রেলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়া কিছুটা স্বপ্নের মতো মনে হলেও তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার বেগের বুলেট ট্রেন চালাতে চায় রেলপথ মন্ত্রণালয়। এ রুটে নতুন রেলপথ নির্মাণ কিংবা বুলেট ট্রেন কিনতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মতো প্রাথমিক কাজও শুরু করতে যাচ্ছে রেলওয়ে। পাশাপাশি ঢাকা থেকে টঙ্গী পাতাল রেলের পরিকল্পনাও রয়েছে।

বর্তমানে ঢাকা থেকে ট্রেন আঁকাবাঁকা পথে টঙ্গী থেকে ভৈরববাজার এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া ঘুরে কুমিল্লা হয়ে চট্টগ্রামে পৌঁছে। এতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে ৩২০ কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দিতে হয়। সময়ও লাগে ৭-৮ ঘণ্টা। কিন্তু বুলেট ট্রেন পরিচালনার জন্য রেলপথের দৈর্ঘ্য কমানো হচ্ছে। এ রেলপথটি যাবে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার মধ্য দিয়ে। ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ-দাউদকান্দি-মোহনপুর-ময়নামতি-লাকসাম-ফেনী-চিনকি আস্তানা-সীতাকুণ্ড হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত এ রেলপথ হতে পারে। এতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে রেলের দৈর্ঘ্য প্রায় ৯০ কিলোমিটার কমে যাবে।

জানতে চাইলে রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল করিডোর ব্যবস্যা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সবদিক বিবেচনায় খুব গুরুত্বপূর্ণ। মহেশখালী ঘিরে জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ হাব গড়ে তোলা হচ্ছে। এ কারণে প্রচুর দেশি-বিদেশি নিয়মিত ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাবেন। এর ওপর এ রুটে যাত্রীর চাপ বাড়ছে দ্রুতগতিতে। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী বুলেট ট্রেন প্রকল্প নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

এ ট্রেনটি চালু করলে যাত্রীরা লাকসাম হয়ে চট্টগ্রামে দেড় থেকে দুই ঘণ্টায় যেতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে অর্থায়নের বিষয়টি নিয়ে সরকার ভাবছে। সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে অর্থায়নের উৎস নির্ধারণ করা হবে।

তিনি বলেন, এ ছাড়া রাজধানীর চারপাশ থেকে প্রতিদিন প্রচুর লোক কাজের প্রয়োজনে ঢাকায় আসছেন। এ চাপ সামাল দিতে পাতাল রেলের একটি পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে পাতাল রেল এবং বুলেট ট্রেন চালু করতে পারলে রেলের সেবার মান অন্য উচ্চতায় পৌঁছাবে।

পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, বুলেট ট্রেন চালু করতে ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি প্রয়োজন। ভারতও মুম্বাই থেকে আহমেদাবাদ বুলেট ট্রেন করতে ৬৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েও অর্থায়ন এবং জমি সংকটে হোঁচট খেয়েছে। এর আগে বিএনপি সরকারের আমলেও একবার পাতাল রেলের মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয় রেলওয়ে। তবে দেশের অর্থনীতি এখন অনেক বড়। সরকার আন্তরিক হলে এ রকম বড় প্রকল্প এখন বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের রেল উইংয়ের প্রধান নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, রেলের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব যাচাই-বাছাই পর্যায়ে রয়েছে। এসব বাস্তবায়ন করতে পারলে রেলের সেবার মান অন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাবে।

রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে সফলভাবে বুলেট ট্রেন চালু করতে পারলে এটিকে কক্সবাজার পর্যন্ত সম্প্র্রসারণ করার সুযোগ থাকবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে উচ্চগতির ট্রেন চললে সম্ভাব্য যাত্রীর সংখ্যা আরও বাড়বে। এতে পর্যটকরা দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পৌঁছতে পারবেন। এতে পর্যটন খাত দ্রুত প্রসার লাভ করবে।

বুলেট ট্রেনে রেলপথের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিশদ ডিজাইনের লক্ষ্যে এ-সংক্রান্ত একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। ১০৯ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের প্রকল্পটির কাজ শুরু হবে চলতি বছরের অক্টোবর থেকে। দুই বছর মেয়াদে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সমীক্ষা ও বিশদ ডিজাইনের কাজ শেষ করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রকল্পটি সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থায়ন করা হবে। বুলেট ট্রেনের লাইন নির্মাণে চীনের সঙ্গে জি-টু-জি ভিত্তিতে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে।

ঢাকা-টঙ্গী পাতাল রেল:
এদিকে রাজধানীতে যানজটের চাপ সামলাতে ঢাকা থেকে টঙ্গী পাতাল রেল নির্মাণের আরেকটি উদ্যোগ নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এর আওতায় কমলাপুর থেকে জয়দেবপুর রুটে বিদ্যমান রেলপথের নিচ দিয়ে এ পাতাল রেল নির্মাণ করা হবে। প্রাথমিকভাবে ৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হচ্ছে। ২০১৮ সালের মার্চের মধ্যে এর সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হলে পাতাল রেলের কাজ শুরু হবে। এর কাজ শেষ হলে ১৫ মিনিটে ঢাকা থেকে টঙ্গী যেতে পারবেন রেলের যাত্রীরা।

রেলওয়ের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ঢাকা থেকে টঙ্গী ৫০ জোড়া ট্রেন চলাচলের কারণে প্রায়ই সড়কগুলো সিগন্যাল দিয়ে বন্ধ রাখতে হয়। প্রতিদিনই এ থেকে সৃষ্ট যানজট বাড়ছে। বিদ্যমান রেলপথের নিচে কোনো ধরনের লাইন না থাকায় পাতাল রেল নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে সড়কপথে যানবাহনের চাপ কমবে। আবার সিগন্যালে রাস্তা বন্ধও রাখতে হবে না। ফলে নাগরিক দুর্ভোগ অনেকাংশে কমে আসবে। সাবওয়ে বা পাতাল রেলের দুটি লাইন থাকবে। এ রেল সাবওয়েটি চালু করা গেলে ঢাকা থেকে টঙ্গী যেতে সময় লাগবে মাত্র ১৫ মিনিট।

সূত্র: সমকাল

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ