কনের পরনে ধবধবে সাদা বিয়ের পোশাক। পায়ে হাই হিল আর মাথায় টায়রা। নীল স্যুটে রাজপুত্রের মতোই ঝলমল করছে পাত্রও। ওমর ও তার সদ্য বাগদত্তা ঘরাম। পাত্রের বয়স মাত্র ১২, পাত্রী ১১। আর তাদের সেই বাগদান পর্ব নিয়ে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
ঘটনাটি ঘটেছে মিশরের কায়রো থেকে ৭৫ মাইল দূরে একটি শহরে। বড় ছেলের বিয়ে উপলক্ষে বড়সড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন কায়রোর বাসিন্দা নাসের হাসান। অনুষ্ঠান মাতাতে হাজির ছিলেন সেখানকার শিল্পীরা। সেই খুশির মুহূর্তকে দ্বিগুণ করতে ওই দিনেই নিজের ছোট ছেলের বিয়ে ঘোষণা দেন নাসের।
পাত্রী ওমরের দূর সম্পর্কের আত্মীয় ঘরাম। সিদ্ধান্ত মতো সেই দিনই সেরে ফেলা হয় বাগদান পর্বও। তবে এ ঘটনায় অবাক নন ওমরের বাবা কিংবা আগত অতিথিদের কেউ-ই। তাদের কাছে অত্যন্ত স্বাভাবিক এই বাগদান পর্ব।
মিশরের সংবিধান অনুসারে, ১৮ বছরের আগে বিয়ে বেআইনি। তবে ইউনিসেফের একটি পরিসংখ্যান বলছে, মিশরের প্রায় ১৭ শতাংশ মেয়ের বিয়েই ১৮ বছরের আগে দিয়ে দেওয়া হয়। আর এই বাল্যবিবাহের ঘটনা বেশির ভাগই ঘটে গ্রামের দিকে। সে সমস্ত ঘটনা থেকে যায় অন্ধকারেই। তবে ওমর আর ঘরামের এই বাগদান পর্ব নিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে সমালোচনা।
নারীদের আইনি সাহায্যকারী কেন্দ্রের প্রধান রেডা এলডানবুকি বিষয়টি জাতীয় শিশু ও নারী উন্নয়ন কেন্দ্রের কাছে জানিয়েছেন। ঘটনাটিকে গুরুতর অপরাধ আখ্যা দিয়ে তদন্তেরও দাবি জানিয়েছেন রেডা। তার বক্তব্য, এই সিদ্ধান্তের ফলে শিক্ষা থেকে শুরু করে বড় হওয়ার অধিকার, সব দিক থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা ওই কিশোরীটিরই।
তবে এ নিয়ে এতটুকু ভাবিত নন নাসের। তার বক্তব্য তিনি কেবল মাত্র ওমর ও ঘরামের বিয়ের সিদ্ধান্তকেই নিশ্চিত করেছেন। ফেসবুক ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতায় পৌঁছয়। ছোট্ট ওমর প্রায়শই বলত যে বড় হয়ে ঘরামকেই বিয়ে করতে চায় সে।
নাসেরের আরও দাবি, ঘরাম বড় হওয়ার পর যাতে অন্য কেউ এসে তাকে বিয়ে করার দাবি না জানাতে পারে তার জন্যই এখন ওমরের সঙ্গে তার বাগদান পর্ব সেরে রাখার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তবে দু’জনের ১৮ বছর বয়স হওয়ার পরই সামাজিক ভাবে তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান নাসের।