আলী নওশের :
হাসার কথা ছিল কার কিন্তু শেষ পর্যন্ত হাসল কে? সব হিসাব পাল্টে দিয়ে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে বিজয়ীর হাসি হাসলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
জরিপের ফল ও বিশ্লেষকদের আভাস ছিল জয়ী হচ্ছেন হিলারি। ভোটের পর হাসিমুখে বিজয় ভাষণ দেবেন তিনি এমনটাই ভাবা হচ্ছিল এতদিন। আসছে ২০ জানুয়ারি শপথ নিয়ে তিনি ঢুকবেন হোয়াইট হাউসে। কিন্তু সব হিসাব উল্টে দিয়ে হোয়াইট হাউসের চাবি দখলে নিলেন রিপাবলিকান পার্টির ট্রাম্প। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তাকে সবচেয়ে অযোগ্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বলা হচ্ছিল। আর তাকেই কিনা দেশটির ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নিলেন মার্কিনিরা।
ভোটের সর্বশেষ পাওয়া ফল অনুযায়ী ট্রাম্প ২৮৮ ইলেক্টরাল কলেজ ভোট পেয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটন পেয়েছেন ২১৮ ভোট। শতকরা হিসেবে ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৮ শতাংশ ও হিলারি পেয়েছেন ৪৭.২ শতাংশ ভোট। নিয়মানুযায়ী ৫৩৮ ইলেক্টরাল কলেজ ভোটের মধ্যে প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য প্রয়োজন ২৭০ ভোট। বিভিন্ন সংস্থার জরিপে বলা হয়, ৫৮তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন প্রায় ৫৪ শতাংশ ভোটার।
মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়াও কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫ আসনের সব কটিতে ও উচ্চকক্ষ সিনেটের ১০০ আসনের মধ্যে ৩৪ আসনে নির্বাচনের ফলে দেখা যায়, রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রতিনিধি পরিষদ তাদের হাতেই রইল। নিউ ইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানরা ২৩৫ আসন পেয়েছে। ডেমোক্র্যাটরা পেয়েছে ১৭৬ আসন। আর সিনেটে রিপাবলিকানরা ৫১ আসন পেয়েছে। এখানে ডেমোক্র্যাটরা পেয়েছে ৪৭ আসন।
মঙ্গলবার রাতে (স্থানীয় সময়) ভোটের ফল প্রকাশের শুরু থেকে দেখা যায় ট্রাম্প এগিয়ে আছেন। পরে মাঝখানে ট্রাম্প ও হিলারির হাড্ডাহাড্ডি লড়াই লক্ষ্য করা যায়। শেষ দিকে এসে স্পষ্ট হয়ে যায়, হোয়াইট হাউসে বারাক ওবামার উত্তরসূরি হচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলে পূর্ণাঙ্গ ফল প্রকাশের আগেই হিলারির সমর্থকরা মুষড়ে পড়েন। কান্নায় ভেঙ্গে পড়তে দেখা যায় সমর্থকদের।
শুরুর দিকে বেশির ভাগ জরিপেই এগিয়ে ছিলেন হিলারি। তবে নির্বাচনের দিন কয়েক আগে হিলারি-ট্রাম্প হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মেলে। এক পর্যায়ে দুয়েকটি জরিপে এগিয়েও যান ট্রাম্প। তবে বেশির ভাগ বিশ্লেষকের রায় ছিল হিলারির পক্ষেই। কিন্তু সব হিসাব উল্টে দিয়ে চমক দেখিয়ে জয় ছিনিয়ে নিলেন ট্রাম্প।
ব্যবসায়ী ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির একেবারে কেন্দ্রে আবির্ভূত হবেন, কয়েক বছর আগেও তার ঘনিষ্ঠরাও এ কথা ভাবতে পারেননি। সেই ট্রাম্প আজ রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন নিয়ে পৌঁছে গেলেন হোয়াইট হাউসে। নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকেই ট্রাম্প নানা বিতর্কে জড়ান। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ওবামার চেয়ে অধিক যোগ্য বলে উল্লেখ করেছিলেন তিনি। এতে সব মহলেই সমালোচিত হন ট্রাম্প। আয়কর দাখিল না করা নিয়েও তার বিরুদ্ধে সমালোচনা হয়েছে। নানা রকম বিরুদ্ধ প্রচারণা সত্ত্বেও দমে যাননি তিনি।
বিজয় ভাষণে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমি সব কিছুর কাঠামোগত উন্নয়ন করবো, কোটি মানুষকে কাজ দেবো। আমাদের একটা অর্থনৈতিক পরিকল্পনা আছে, সে অনুযায়ী কাজ হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্বের উন্নয়নে নেতৃত্ব দেবে আমেরিকা। এটাই এখন আমাদের চ্যালেঞ্জ। দেশের উন্নয়ন ছাড়া এখন আমাদের কোনো চিন্তা নেই।’
ধনকুবের থেকে প্রেসিডেন্ট হওয়া ট্রাম্প বলেন, ‘আমি একজন ব্যবসায়ী হিসেবে বিশ্বে সুনাম অর্জন করেছি। এখন দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। আমি উপলব্ধি করছি, এটা করা উচিৎ।’