সাগর কর্মকার জাবি প্রতিনিধি :
স্কুল শুরুর দিনগুলোতে আমাদের অনেকেরই নতুন অভিজ্ঞতার নাম হয়তো একটাই, বন্ধুত্ব! পরিবারের গণ্ডি ছাড়িয়ে চেনা জগতটা যে এক লাফে অনেক দূর চলে গিয়েছিল সে তো বন্ধুদের হাত ধরেই। জীবনের পথে হাঁটতে হাঁটতে আজ যে যেখানেই থাকি না কেন চলার পথে বন্ধুত্ব নামের এই পাথেয়টির তুলনা বোধ হয় আর কিছুর সঙ্গেই চলে না। এ এমনই বিষয় যেন কিছু না থাকলেও বন্ধুত্ব থাকলে চলে আবার সব থাকলেও বন্ধুত্ব ছাড়া চলে না!
বন্ধুদের আমরা সবসময় কাছের মানুষই ভাবি। কিন্তু আমরা যাদের বন্ধু বলে মনে করি তাদের সকলের সান্নিধ্য আমাদের পক্ষে মঙ্গলজনক নাও হতে পারে। বন্ধুদের মধ্যেই এমন কিছু মানুষ থাকেন, যাদের এড়িয়ে চলাই ভাল। চলুন জেনে নেই সেসব বন্ধুদের কথা।
যারা কথায় কথায় সমালোচনা করেন: বন্ধুদের মধ্যে কিছু মানুষ থাকেন দেখবেন, যারা আপনার সমস্ত কাজেরই সমালোচনা করেন। সমালোচনা মানে কোনো গঠনমূলক সমালোচনা নয়, বরং সোজাসাপ্টা আপনার নিন্দা করা, হীনতা প্রমাণ করা। এই ধরনের সমালোচনা আপনার মনোবল এবং আত্মবিশ্বাস দুটোই ভেঙে দিতে পারে। কাজেই এই ধরনের বন্ধুকে এড়িয়ে চলুন।
যারা কথায় কথায় প্রশংসা: প্রথম ধরনের বন্ধুদের বিপরীত রকমের ক্ষতি করেন এসব বন্ধুরা। প্রকৃত বন্ধু তিনিই, যিনি আপনার ভালো কাজটির প্রশংসা করবেন, আর খারাপ কাজটির ক্ষেত্রে আপনার ভুল ধরিয়ে দেবেন। কিন্তু ভাল-মন্দ নির্বিশেষে সমস্ত কাজের প্রশংসা করেন যিনি করেন, তিনি আপনার খুব উপকারী বন্ধু হতে পারেন না। তার থেকে একটু দূরেই থাকুন।
যারা স্বার্থপর: স্বার্থপর মানুষজন সবসময়ই পরিতাজ্য। আপনার বিপদে-আপদে এদের কখনো পাশে পাবেন না। অথচ আপনার কাছ থেকে সাহায্য নেয়ার সময় এরা বিন্দুমাত্র দ্বিধা করবেন না। কাজেই এ রকম মানুষকে বন্ধু মনে করে খুব কাছে টেনে নেবেন না।
যারা অত্যধিক ব্যস্ততার ভান করেন: বন্ধুদের মধ্যে কিছু মানুষ থাকেন যারা সর্বদাই ব্যস্ত। কীসের যে ব্যস্ততা এদের, তা অবশ্য আপনি বুঝতে পারবেন না। কিন্তু এদের এই রহস্যময় ব্যস্ততার ফলে আপনাকে এড়িয়ে চলা শুরু করবে। কাজের সময়ে এদের পাশে পাবেন না, বন্ধুরা একসঙ্গে কোনো পরিকল্পনা করলে এদের এই ব্যস্ততার কারণেই সেই পরিকল্পনা বাতিল করতে হবে। কাজেই এদের থেকেও নিরাপদ দূরত্ব রক্ষা করে চলুন।
যারা নিজেদের সমালোচনা শুনতে প্রস্তুত নন: এই ধরনের বন্ধুদের নিয়ে আরেক বিপদ। বন্ধুদের কোনো কাজ আপনার ভাল না লাগতেই পারে। সেই কাজের প্রতিবাদ বা সমালোচনা করার অধিকারও বন্ধু হিসেবে আপনার অবশ্যই রয়েছে। কিন্তু সেই সমালোচনা শুনেই আপনার বন্ধু ক্ষেপে যান, ঝগড়া শুরু করেন, তা হলে কিন্তু বিপদ। এই ধরনের বন্ধুদেরও তাই একটু দূরেই রাখুন।
নানা সংস্কৃতিতে, নানা দেশে বন্ধুত্বের রীতিনীতিতে আগেও যেমন ভিন্নতা ছিল, এখনো তেমনি ভিন্নতা আছে। কিন্তু বন্ধুত্ব তো তাই যাকে কোনো নিক্তি দিয়ে মাপা যায় না, সংজ্ঞা দিয়ে বাঁধা যায় না। আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে বন্ধুত্ব। পারস্পরিক বিশ্বাস, সঙ্গ, সহানুভূতি, পারস্পরিক চিন্তাভাবনা ও মূল্যবোধের গুরুত্ব দেওয়া, মানসিক সমর্থন দেওয়া ইত্যাদি থেকেই সৃষ্টি হয় বন্ধুত্বের।