রাস্তায় যারা থাকে তারা সবাই ইডিয়ট : প্রিন্স মুসা (ভিডিও)
থাকেন রাজধানীর গুলশানে প্রাসাদসম অট্টালিকায়। প্রতিদিন নিত্যনতুন হীরাখচিত চকচকে জুতা পায়ে দেন। খাবারের জন্য প্রতি বেলা ডাইনিং টেবিলে সাজানো থাকে ২৫-৩০ আইটেম। খাবার মুখে তুলে দেন স্ত্রী আর মুখ মুছে দিতে টিস্যু নিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে থাকে শুটেট বুটেড ললনারা।
দেশের অন্যতম ধনাঢ্য ব্যক্তি হিসেবে সুপরিচিত প্রিন্স মুসা বিন শমসের। সম্প্রতি ডেনমার্ক টেলিভিশনের (ডিআর টিভি) সাংবাদিক এরিকসনকে দেয়া সাক্ষাৎকারের ভিডিওতে এমনটি দেখা গেছে। সাক্ষাৎকারে দেশের গরিব মানুষের সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করে আবারো আলোচনায় এসেছেন তিনি।
তার দৃষ্টিতে রাস্তায় থাকা সব মানুষ ইডিয়ট। তাদের কারও চোখে বড় কিছু হওয়ার বা ভাগ্য বদলের কোনো স্বপ্ন নেই। ডেনিস সাংবাদিক মুসার এ মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, তিনি সারাবান নামে ১৩ বছরের এক ছেলেকে চেনেন, যার বাবা নেই, মায়ের একার আয়ে সংসার চলে না, এ কারণে সে বাধ্য হয়ে কাজে নেমেছে। এখন তার কি করা উচিত? জবাবে প্রিন্স মুসা বিন শমসের বলেন, তারা সবাই ইডিয়ট। তার মা কাজ করবে, ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া শেখাবে কিংবা ছেলে এক বেলা কাজ করে বিকেলে পড়াশুনা করবে। কিন্তু অধিকাংশ রাস্তার মানুষ তা করে না।
এদিকে বিদেশি টেলিভিশনে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষদের তাচ্ছিল্য করায় প্রিন্স মুসাকে নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সবাই বলছেন, হতে পারেন তিনি দেশের অন্যতম ধনাঢ্য ব্যক্তি কিন্তু দেশের জন্য কি করেছেন যে তিনি মানুষকে ছোট করে কথা বলবেন।
২১ মিনিট ৯ সেকেন্ডের সাক্ষাৎকার ভিডিওর শুরুতে দেখা যায় ডেনিশ সাংবাদিককে গাড়িতে গুলশানের ঢাকা প্যালেসে নিয়ে আসা হয়। বাড়িটির প্রবেশ পথে একাধিক দেহরক্ষী তাকে নিতে এগিয়ে আসে। ভেতরে প্রবেশের পর তিনি চারপাশে মুসা বিন শমসেরের ছবি টানানো দেখতে পান। এর কিছুক্ষণ পর কমলা রঙের ড্রেস পরে মুসা বিন শমসের সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসেন। এরিকসনকে এ সময় কালো শুট পরিহিতা এক নারী মুসা বিন শমসেরকে নিয়ে লেখা একটি ম্যাগাজিন উপহার দেন। চারপাশে তার রঙিন বিভিন্ন ছবির একটির সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিক প্রিন্স মুসার কাছে হিডিয়াসলি রিচ শব্দের অর্থ জানতে চান। এ সময় তিনি হেসে বলেন, ইট মিনস ডেঞ্জারাস রিচ।
এ সময় তাদের সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে এবং দুজন নারীকে আলমারির কাভার্ড খুলতে দেখা যায়। সারিবদ্ধভাবে সাজানো কমপ্লিট শুট দেখে সংখ্যা জানতে চাইলে মুসা বলেন, শত শত। এরপর কয়েকজন যুবককে বড় বড় লাগেজ টেনে এনে খুলতে দেখা যায়। ভেতরে বিভিন্ন খোপে জুতা সাজানো।
এ সময় মুসা বিন শমসের জানান, তার প্রায় সবগুলো জুতায় হিরকখচিত। এক বেলা করে পরিধান করেন। এরিকসন জানতে চান, কখনও কি হীরাখচিত জুতা পায়ে চলার সময় আবর্জনায় পা পড়েছে। জবাবে বলেন, আমি কখনও রাস্তায় হাঁটার সুযোগ পাই না। গাড়ি থেকে নেমেই অফিস, রেস্টুরেন্ট কিংবা শপিংমল।
এরপর বের করা হয় বিভিন্ন ব্রান্ডের ঘড়ি। ইউটিউবে আপলোড করা ভিডিওর পরবর্তী দৃশ্যে দেখানো হয় একটি বস্তির ছবি। এ ভিডিওতে বস্তির নোংরা পরিবেশ, কুকুরের পাশে এক শিশু হেঁটে বেড়াচ্ছে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
এ সময় এরিকসন শাহপরান নামে এক শিশুর সঙ্গে কথা বলেন। ঘরে তার মা ও বোনকে দেখা যায়। শাহপরান জানায়, তার বাবা নেই। মায়ের একার আয়ে তার সংসার চলে না। সে জুতার কাজ করে। অসুস্থতা নিয়ে কাজে যেতে হয়।
সাংবাদিক জানতে চান, শাহপরানের বাবা নেই, মায়ের একার আয় কম। তাহলে কীভাবে চলবে? জবাবে প্রিন্স মুসা বলেন, তারা সবাই ইডিয়ট। ওই মায়ের শাস্তি হওয়া উচিত। এমন বহু মা-বাবা দেশে রয়েছে।
এ সময় মুসা সাংবাদিককে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে যান। টেবিলে বিভিন্ন পদের খাবার দেখা যায়। এরিকসন জানতে চান, তিনি নিয়মিত এতো ধরনের খাবার খান কিনা। জবাবে বলেন, এর চেয়ে বেশি পদের খাবারও থাকে। এসময় কয়েকজন তরুণীকে তার মাথা আচড়ে দিতে ও পাখা দিয়ে বাতাস করতে দেখা যায়। মুসার পাশে বসা স্ত্রীকে দেখিয়ে বলেন, আমি বিয়ের পর থেকে নিজ হাতে কখনও খাবার খাইনি। ও আমাকে খাইয়ে দেয়। এ সময় মুসার স্ত্রীকে মুখে খাবার তুলে খাইয়ে দিতে দেখা যায়।
পরবর্তী দিন এরিকসনকে মুসার অফিসে যেতে দেখা যায়। বিদেশে কত লোক পাঠিয়েছেন এরিকসন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিন কোটিরও বেশি। তার গেটকো ব্যবসা সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, এটি ফিলিপাইনের পানামায় রেজিস্টারি করা। সেখানে তাকে কোনো ট্যাক্স দিতে হয় না।
কেন বাংলাদেশে ব্যবসা করছেন না জানতে চাইলে বলেন, এখানে ব্যবসার আগ্রহ নেই। তবে তিনি মনে প্রাণে চান, বাংলাদেশের মানুষ তার মতো সুখে শান্তিতে বসবাস করুক।
বিদেশে যারা যান তারা কেমন আছেন জানতে চাইলে বলেন, অনেক ভালো। বিদেশে ছিলেন এমন কিছু কর্মীর কাছে মুসা যাবেন কিনা প্রশ্ন করলে বলেন, আমি জনগণের মাঝে কখনওই যাই না।
এ সময় এরিকসন সৌদি ফেরত লায়লা নামের এক নারীর গ্রামের বাড়ি যান। ওই নারী জনান, সৌদিতে যার বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন সেই বাড়ির গৃহকর্তা ও তার ছেলেদের কুনজরে পড়েন। শারীরিক সম্পর্ক করতে অস্বীকৃতি জানানোর ফলে তাকে মারধর করা হতো। একপর্যায়ে ওই বাড়ি থেকে পালাতে জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়ে পা ভেঙে যায়।
আলোচনার একপর্যায়ে মুসা জানান, তিনি প্রতিদিন গোলাপ ফুলের পানিতে গোসল করেন। কেন এমনটি করেন জানতে চাইলে বলেন, ইটস মাই স্টাইল। শেষ পর্যায়ে এরিকসন জানতে চান, এমন কিছু কি আছে যার মাধ্যমে বিশ্ব মুসা সম্পর্কে জানতে পারবে। জবাবে তিনি কিছুক্ষণ সময় নিয়ে কার্টিয়ার ব্রান্ডের একটি ঘড়ি এরিকসনের হাতে দেন। এ সময় এরিকসন না নিতে চাইলে মুসা বলেন, এটা ঘুষ না মুসার উপহার।