আজিজুল হক মানিক:
কেউ আল্লাহকে বিশ্বাস করুক আর না-ই করুক মানুষকে অবশ্যই মৃত্যু বরণ করতে হবে ৷ পৃথিবী কারো আসল ঠিকানা নয় ৷ সবাইকে পৃথিবী থেকে অবশ্যই বিদায় নিতে হবে ৷ হযরত আজরাইল(আঃ) আল্লাহর হুকুমের সঙ্গে সঙ্গে যার জান কবজ করবেন তার দেহের মধ্যে ডুব দিয়ে তার দেহের প্রতিটি রগ রেশা থেকে তার রূহকে টেনে বের করে নিয়ে আসেন ৷ ‘যারা আখিরাত প্রাপ্তির আশায় ঈমান অবস্থায় যথাযত প্রচেষ্টা চালায়, তাদের সে প্রচেষ্টা গ্রহণযোগ্য হয়ে থাকে ৷’(আল ইসরা ১৯)
আমরা বিশ্বাস করি মুসলিম উম্মাহর অনুকরণীয় সর্বোত্তম আদর্শ হলো রসুল(সঃ) ৷ নবীর জীবনাদর্শ অন্য সকল বিধানের উপর কর্তৃত্বশালী ৷ আল্লাহ যে ব্যাপারে কোন বিধান অবতীর্ণ করেননি তা মান্য করা মুনাফিক হওয়ারই নামান্তর, যা প্রকৃত ঈমানের সাথে একত্রে অবস্থান করতে পারেনা ৷ যারা শরীয়তের সুদৃঢ় অবস্থান থেকে বেরিয়ে যাওয়াকে বৈধ মনে করে, তাদের সাথে মুসলিম মিল্লাতের কোন সম্পর্ক থাকে না ৷ প্রকৃত অর্থে আল্লাহ ও তাঁর রসুল ছাড়া আর কারো আনুগত্য করা বৈধ নয় ৷ সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ ইসলামের মহান নিদর্শনের অন্যতম ৷ দ্বীনের রক্ষণাবেক্ষণ ও তার মর্যাদা রক্ষার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটা ৷
‘ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি জিনিসের উপর প্রতিষ্ঠিত ৷ প্রথমত, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ তাঁর রসুল ৷ দ্বিতীয়ত, নামাজ কায়েম করা ৷ তৃতীয়ত, যাকাত আদায় করা ৷ চতুর্থত, হজ্জ করা ৷ পঞ্চমত, রমজান মাসে রোজা রাখা ৷’(বুখারী ও মুসলিম )৷ সমস্ত মুসলিম উম্মাহ এ ব্যাপারে একমত যে ইসলামের ভিত্তি মূলত পাঁচটি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে ৷
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর বিভিন্ন হাদীস থেকে মৃত ব্যক্তির সাথে কবরে যে প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হবে তার সার সংক্ষেপ হচ্ছে এই যে, মৃত দেহকে যখন তার আত্মীয় স্বজন দাফন করে চলে আসে তখনই তার রূহকে প্রশ্ন করার সময় হয় ৷ দাফন ছাড়া অন্য কোনভাবে সৎকার করা হোক বা আদৌ সৎকার না করা হোক মৃতের কাছে সুনির্দিষ্ট সময়ে (যা আল্লাহই ভাল জানেন ) মুনকার ও নকীর নামক দুই ফেরেশতা অসামান্য প্রতাপ ও শক্তিমত্তার সাথে কবরে অর্থাৎ মৃতের কাছে হাজির হবে এবং মৃত ব্যক্তিকে তিনটি প্রশ্ন করবে ৷ মৃতের অবস্থা যাই হোক না কেন কবর আযাব ও কবরের সওয়াল জওয়াব সম্পর্কে সন্দেহাতীতভাবে প্রত্যেক মুসলমানকে বিশ্বাস করতে হবে ৷ কবর বলতে কোন নির্দিষ্ট স্থান মনে না করে মৃত্যুর অব্যবহিত পরবর্তী সময়কে বুঝতে হবে ৷ যা হোক, মুনকার নকীর প্রথমে জিজ্ঞেস করবেন, তোমার রব বা প্রতিপালক কে? দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস করবেন, তোমার নবী কে? তৃতীয়বার প্রশ্ন করবেন, তোমার দীন বা জীবনাদর্শ কি? মৃত ব্যক্তি ঈমানদার ও নেককার হলে প্রশ্নের সাথে সাথে জবাব দিয়ে বলবে, আমার রব আল্লাহ যার কোন শরীক নেই ৷ দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাবে বলবে, “আমার নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম” এবং তৃতীয় প্রশ্নের জবাবে বলবে, “আমার দীন আল্লাহ তায়ালার মনোনীত ইসলাম ৷”
মৃত দেহের রূহ যখন মুনকার ও নকীরের প্রশ্নের জবাব সঠিকভাবে দিবে তখন আল্লাহ পাক অনতিদূর থেকে ফিরিশতাদ্বয়কে নির্দেশ দেবেন-‘’হে ফিরিশতাদ্বয়’’ একে তোমাদের আর কিছু জিজ্ঞেস করতে হবে না ৷ আমি এর উপর সন্তূষ্ট হয়েছি ৷ তোমরা একে নতুন বরের ফুল শয্যার মত কোমল বিছানায় আরামে শুইয়ে রাখ আর এর কবর থেকে বেহেশত পর্যন্ত একটি সুড়ঙ্গ করে দাও যেন সে শুয়ে বেহেশতের সুগন্ধি ও আমেজ অনুভব করতে পারে ৷ আল্লাহর আদেশ পাওয়া ফিরিশতাদ্বয় তার কবর থেকে বেহেশত পর্যন্ত একটি সুড়ঙ্গ করে দেবেন ৷ শেষ বিচারের আগে কিয়ামতের পূর্বক্ষণ পর্যন্ত সে ব্যক্তি সেখানে শুয়ে শুয়ে বেহেশতের শান্তি পেতে থাকবে ৷ অতপর ফিরিশতাদ্বয় তার আত্মাকে আল্লাহ পাকের পবিত্র আরশের নীচে নূরের তৈরি এক প্রকার ঝাড়বাতির মধ্যে রেখে দিবে ৷ উক্ত পবিত্র আত্মা সেখানে কিয়ামত পর্যন্ত অবস্থান করবে ৷
ইসলামের যাবতীয় আইন-কানুন বলুন আর কুরআন-হাদীসই বলুন সবগুলোর একটাই মাত্র উদ্দেশ্য আর তা হচ্ছে, মানুষকে মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে আল্লাহর দাসে পরিণত করা ৷ যেন সে আল্লাহর দাসত্ব করার পথ ধরে ইহকালেও শান্তি পেতে পারে,পরকালেও মুক্তি পেতে পারে ৷ আর এতে যদি মানুষ ব্যর্থ হয়, অর্থাৎ মানুষ যদি মানব রচিত আইনের চাপে পড়ে আল্লাহর যাবতীয় হুকুম আহকাম মেনে চলতে ব্যর্থ হয়, তবে সে যেমন ইহকালেও হবে লাঞ্ছিত, হেয়,পদদলিত, তেমন পরকালেও ভোগ করবে কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি (বলছেন আল্লাহ) ৷ মানুষকে হতে হবে একমাত্র আল্লাহরই দাস, আর তা হতে পারলেই মুক্তি ৷
মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলাম ৷ তিনি ইসলাম সম্পর্কে কবিতা ও গীতি রচনা করেছেন ৷ ইসলাম সম্পর্কে অনেক গীতির মধ্যে তার আলোচিত গীতি হচ্ছে-মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই ৴ যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই ৴ আমার গোরের পাশ দিয়ে ভাই নামাজীরা যাবে ৴ পবিত্র সেই পায়ের ধ্বনি এ বান্দা শুনতে পাবে ৴ গোর আজাব থেকে এ গুনাহগার পাইবে রেহাই ৴ কত পরহেজগার খোদার ভক্ত নবীজীর উম্মত ৴ ঐ মসজিদে করে রে ভাই কোরান তেলাওয়াত ৴ সেই কোরান শুনে আমি যেন পরাণ জুড়াই ৴ কত দরবেশ ফকির রে ভাই মসজিদের আঙিনাতে ৴ আল্লাহর নাম জিকির করে লুকিয়ে গভীর রাতে ৴ আমি তাদের সাথে কেঁদে কেঁদে, আল্লাহর নাম জপিতে চাই ৷৷
কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই ইসলামী গীতি অত্যন্ত সাফল্য জনক ৷ এটি বাস্তব হয়েছে, মৃত্যুর পর তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে কবর দেয়া হয় ৷
দরগাহ হযরত শাহজালাল মসজিদের পাশে কবর দেয়া হয়েছে আমার পিতা কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাণ পুরুষ মুহম্মদ নূরুল হক, মাতা লেখিকা নূরুন্নেসা হক, নানা শিক্ষক মাওলানা সিদ্দেক আলী, নানী রহিমা খাতুন,মামা কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের পাঠাগারের দায়িত্ববান ব্যক্তিত্ত নাসীর উদ্দিন আহমদ, চাচাতো ভাই বিশিষ্ট লেখক মুহাম্মদ আব্দুল হামিদ ৷ আমি দরগাহ মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় এসব কবর দেখে থাকি ৷
আমার অনুভূতি হচ্ছে মৃত্যুর পর আমাকে যেন দরগাহ হযরত শাহজালাল মসজিদের পাশে কবর দেয়া হয় ৷