মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ। সাড়ে চার দশকের বাংলাদেশ বিশ্বরাজনীতির শিকার হয়েছে বহুবার। বাংলাদেশের স্বীকৃতি দেয়া থেকে শুরু করে আজ অবধি বাংলাদেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়, রাজনীতি হয়। এমন ষড়যন্ত্র আর রাজনীতি সামলে নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, এগিয়ে যাচ্ছে বাঙালি।
বাংলাদেশ নিয়ে বিশ্ব রাজনীতির আরেকটি অধ্যায়ের নাম ‘পদ্মাসেতু’। বাঙালির স্বপ্ন-সাধ দমিয়ে রাখার বিশ্বব্যাংকের ষড়যন্ত্র হালের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উদাহরণ বলেই প্রমাণিত।
অভিযোগ আছে, অভিযোগ নেই- এমন দোলাচলে থমকে যায় স্বপ্নের পদ্মাসেতু। দুর্নীতি হয়েছে এমন অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক আটকে দেয় চুক্তি হওয়া অর্থ।
পদ্মায় বিশ্বব্যাংকের নাটকের শুরু প্রায় পাঁচ বছর আগে। ২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল পদ্মায় এক ভাসমান ফেরিতে ঘটা করে ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করেছিল বিশ্বব্যাংক। শুধু বাংলাদেশেরই নয়, একক অর্থায়নে এশিয়ার মধ্যে তখন এটিই ছিল বিশ্বব্যাংকের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প। তাই চুক্তিস্বাক্ষর অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন বিশ্বব্যাংকের তখনকার ব্যবস্থাপনা পরিচালকও।
তবে চুক্তির পাঁচ মাসেই মুখ ফিরিয়ে নেয় সংস্থাটি। চুক্তির বছরেই সেপ্টেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদ্মাসেতু প্রকল্পে ‘উচ্চপর্যায়ে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ আনে সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংক বা সহ-অর্থায়নে চুক্তিবদ্ধ এডিবি ও জাইকার কেউ-ই তখনো পর্যন্ত ঋণের কোনো কিস্তি ছাড় করেনি। তাই দুর্নীতির ষড়যন্ত্রটি ঠিক কোন পর্যায়ে এবং এতে কারা কোনভাবে কতখানি জড়িত তা স্পষ্ট ছিল না। সংস্থা বা সরকারের পক্ষ থেকেও এটি পরিষ্কার করা হয়নি। প্রমাণ ছাড়াই বরাদ্দকৃত অর্থ আটকে দেয়। মুরব্বি এ প্রতিষ্ঠানের পর মুখ ফিরিয়ে নেয় অন্যান্য বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানও।
তবে বিশ্বব্যাংকের এমন আচরণে হাল ছাড়েনি বাংলাদেশ, হাল ছাড়েননি বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। সকল অভিযোগ পায়ে মাড়িয়ে পদ্মার বুকে মেলে ধরেছেন বাঙালির স্বপ্ন। প্রমাণ করেছেন, ‘পদ্মাসেতু বাংলাদেশে চ্যালেঞ্জের অপর নাম’।
প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় মনোবলে সমর্থন জুগিয়ে শক্তি-সাহস দিয়েছে অদম্য মানুষেরা। ফন্দিবাজ বিশ্বব্যাংকে ‘না’ জানিয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষেরাই দেশের এই বৃহৎ প্রকল্পের দায় ঘারে চাপিয়ে নেয়।
দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে পদ্মাসেতুর কাজ। পদ্মার বুকে প্রতিদিন বুনন হচ্ছে ‘স্বপ্ন’। পদ্মার উত্তাল ডেউয়ে দোল খাচ্ছে বাঙালির স্বপ্ন। পদ্মা চরের মরিচিকার মতো নয়, স্বপ্ন এখন বাস্তবায়নের পথে। সকল ক্লেশ আর অপমান পেছনে ফেলে পদ্মায় বাংলাদেশ প্রকাশ হয়েছে তার আপন মহিমায়।
বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করেই ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর মূল সেতুর কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যে প্রকল্পের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি আরেকবার মাথা উচুঁ করে দাঁড়াবার সুযোগ পায়।
পদ্মাসেতুর বিষয়ে কথা হয় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে। তিনি বলেন, উন্নয়নে চ্যালেঞ্জ থাকবেই। আমরা সে চ্যালেঞ্জ কিভাবে মোকাবেলা করছি, সেটাই বড় কথা। বিশ্বব্যাংকের ভূমিকার কথা এখন পেছনের ইতিহাস। আমরা সামনে যেতে চাই।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পদ্মাসেতুর কাজ সম্পন্ন হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এটিই এখন আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে যথা সময়েই কাজ সম্পন্ন হবে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের সঙ্গেও। পদ্মাসেতুর স্বপ্নসারথী নাছিম বলেন, পদ্মাসেতু গোটা বাংলাদেশের স্বপ্ন। এটি কোনো অঞ্চলের স্বপ্ন বলে আমি মনে করি না। এর সঙ্গে বাংলাদেশের উন্নয়ন, সমৃদ্ধি জড়িত। এমন একটি প্রকল্প নিয়ে আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে, তা আমাদের জানাই ছিল। বিশ্বব্যাংক যে অভিযোগ তুলেছে, তার কোনো প্রমাণ মেলেনি। অর্থ না ছাড়া ছিল বিশ্বব্যাংকের ভুল সিদ্ধান্ত।
পদ্মাসেতু বাঙালির আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, এটি আমাদের জন্য একটি শিক্ষাও বটে। আমরা যে পারি, তা প্রধানমন্ত্রী প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। সময় এসেছে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়াবার।