বশির আহমদ জুয়েল ::
চলছে বিজয়ের মাস।দেশ আগাচ্ছে আপন গতিতে। মুক্তাঙ্গন হচ্ছে দুষিত। বিজয়বিরোধীরা বিজয়শক্তির সাথে মিশে হচ্ছে একাকার। বাম-ডানের সন্ধিতে কেবল সামন-পিছন দৃশ্যমান। বাণিজ্যরূপে মিশ্রিত হচ্ছে নানা রঙ। সাহিত্যের বিভাজন অপরিবর্তিত। সাংস্কৃতিক বলয়ে দলীয় শক্তির উন্মাদানা। কিছু সংস্কৃতিকর্মীরাও জড়াচ্ছে অপসংস্কৃতিতে। মঞ্চনাটক বা পথনাটকে অভিষেক না হলেও ভিজ্যুয়াল নির্মাণে বাজাচ্ছে সংস্কৃতির বারোটা। গবেষকদের সংখ্যা বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। নামের আগে পদবীর ভাড়ে কেউ কেউ হাঁটছে মাথা নুইয়ে। বাংলা প্রভাষকরা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে নিজেকে কবি-সাহিত্যিক পরিচয়ে বিস্তৃত করতে ছাত্র-ছাত্রীদের এসাইনম্যান্ট দিচ্ছেন অনায়াসে। সাংবাদিকতায় বিশ্বজরিফে প্রথম হবার সম্ভাবনা প্রবল। খবরের শিরোনামে উস্কানি কিংবা সাম্প্রদায়িক ফ্যাসাদ সৃষ্টির নজির অনেক। বেশিদিন দূরে নয় দেশে সাংবাদিকের চেয়ে সম্পাদক বেশি হবার। বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামই নয় কেবল পরিবারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম সৃষ্টির পথেই আমরা আগাচ্ছি। বর্তমানেই দেশের টিভি চ্যানেলগুলোর রিপোর্টারদের অনেকেই নিজস্ব চ্যানেলের মালিকানাও পেয়ে গেছেন। রিপোর্ট টিভিতে যাবার আগে মোবাইলের মাধ্যমেই তারা লাইভ সম্প্রচার করাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। কিছু পুলিশ-কালোবাজারি ও সাংবাদিকদের কার্যক্রমে অন্তমিলও বৃদ্ধি পেয়েছে। পুলিশে ঘুষ নিয়ে শ্রেণী মোতাবেক ভাগ করে। অর্থাৎ সিন্ডিকেট ঘুষের ব্যবহার কমে নি। কালোবাজারিরা সিন্ডিকেট ভিত্তিক দ্রব্যপণ্য মজুত করে মূল্য বৃদ্ধি করে। কিছু সাংবাদিকরা এখন সিন্ডিকেট ভিত্তিক সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচার করার প্রবনতাও বেড়েছে। দেশের জনসংখ্যার অধিকাংশই এখন আওয়ামী পরিবারের সদস্য! আগামীতে দলীয় সমর্থকদের ভোটেই আওয়ামীলীগের ক্ষমতা ধরে রাখার সম্ভাবনা রয়েছে! সামাজিক বাণিজ্যের নানা রাস্তার জন্ম হচ্ছে। হাওর কিংবা পরিবেশ অথবা নদী নিয়ে আন্দোলনের নামে নিজে ফায়দা লুটায় শিক্ষিতরা এখন মরিয়া।
বেতার টিভিতে নিজস্ব শিল্পীর চাহিদা ও সুযোগ সুবিধাও বেড়েছে। দেশের প্রধানমন্ত্রীকে বহন করা বিমান বার বার যান্ত্রিক ত্রুটির মুখোমুখি হয়েছে! বিজয়ের পয়তাল্লিশ পালনের আগে দেশ নিয়ে সবারই ভাবনা ভিন্ন ভিন্ন। কেবল ষোলই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস, তা-ই অভিন্ন।
শিক্ষক মহোদয়রা রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের পিছে ঘুর ঘুর করছেন যতেষ্টই। দেশে তেল মারার প্রচলন ভুলে বেড়েছে জেলের আমদানী। শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গ্রন্থ রচনায় রেকর্ড হচ্ছে। জাত কবিও নিজ স্বার্থে ভিখেরীর উপাদি অর্জন করেছেন।
আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে এখনো মুক্তি লাভের আশায় ছটফট করি। ধর্ষণ, হত্যার বিচারের হিসাবে গড়মিল হলেও মামলার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাতে সরকারী আমলা ও আইনজীবিদের বাণিজ্যও তুঙ্গে। সর্বোপরি দেশে মন্ত্রনালয় বা সচিবালয় থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে অযোগ্যদের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। যার প্রমাণ হিসেবে কেবল দশ টাকা কেজির চাউল বিক্রির কাহিনীই যথার্থ। শীত শুরু হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংক লাখ লাখ কম্বল প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেছে। যার সিংহ ভাগ বিতরণের দায়িত্ব পড়বে দলীয় কর্মীদের হাতে। আমি নিশ্চিত অনেক কম্বল পাওয়া যাবে নেতা-কর্মীদের নিজের ঘরেই।
আমরা সাধারণ মানুষেরা স্বপ্ন দেখি, লাল-সবুজের নিশান উড়িয়ে সবুজ শ্যামল বাংলাকে সোনার বাংলা হিসেবে দেখতে। আদৌ তা দেখতে পারবো কি না প্রশ্ন করি নিজেকে কিন্তু নিশ্চুপ ঘুমিয়ে থাকে আপন বিবেক।
বশির আহমদ জুয়েল, মন্ট্রিয়ল, কানাডা।