আন্তর্জাতিক চোরাচালানীরা বেকার ও বিপদগ্রস্থ’ এবং নারী ও শিশুদের দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের নামে নিয়ে স্বর্নসহ চোরাচালানের মালামাল পাচারে ব্যবহার করছে। সাম্প্রতি বেশ কিছু চোরাচালান পন্যের বাহককে পাচারকৃত মালামালসহ আটকের পর চোরাকারবারীদের এসব চাঞ্চল্যকর কৌশল জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। কাস্টমসসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কঠোর নজরদারীর কারণে সাম্প্রতিক সময়ে ঘন ঘন কৌশল বদলে ফেলছেন আর্ন্তজাতিক চোরাকারবারীরা।
তারা চোরচালানীর পন্যের বাহক হিসেবে ব্যবহার করছেন নারী ও শিশুদের। কখনো কখনো একটি সম্পূর্ন পরিবারকেও ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার কখনোবা চক্রগুলো একাধিক বাহক ব্যবহারের মাধ্যমে চোরাই পন্য পাচার করছে। এ ক্ষেত্রে চোরাই পন্যের বাহক সরাসরি শাহজালাল বিমানবন্দরে না এসে চট্টগ্রাম কিংবা সিলেট বিমানবন্দরে অবতরন করেন।সেখান থেকে অভ্যন্তরীন ফ্ল্যাইটে চোরাই পন্যের হাতবদল হয়। আবার বিমান কিংবা বিমানবন্দরের ভেতরেই লাগেজগুলো হাত বদল করা হচ্ছে।
গতকাল সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভিযান চালিয়ে কাস্টমস গোয়েন্দারা ১৬টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করেছেন। যার ওজন ১.৮৭২ কেজি। স্বর্ণের মূল্য প্রায় এক কোটি টাকা। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় দুবাই থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের বিজি ০৫২ ফ্লাইট থেকে এ স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরের সহকারী কমিশনার (কাস্টমস বিভাগ) সাজ্জাদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তল্লাশি চালানো হয়। এসময় বিজনেস ক্লাসের ৪২নং সিটের উপরের কেবিন খুলে পাওয়া যায় ১৬টি স্বর্ণের বার। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি। এর আগে ১৭ নভেম্বর সিলেটের এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৯ কেজি ওজনের স্বর্ণের বার ধরা পড়ে।
এর আগে গত রোববার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে চট্টগ্রাম থেকে আগত শামিম নামে এক যাত্রীর কাছ থেকে ২ কেজি ৬’শ গ্রাম স্বর্ন উদ্ধার করে ঢাকা কাস্টমস হাউজ কতৃপক্ষ। একই দিন দুপুরে দুবাই থেকে আগত এক নারী ও পুরুষ যাত্রীর কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মূল্যের সিগারেট, কসমেটিকসসহ মূল্যবান বিভিন্ন পন্য জব্দ করে বিমানবন্দর কাস্টমস হাউজ। গত ১১ এপ্রিল রাজধানীর হযরত শাহজালাল আর্ন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মালয়েশিয়া ফেরত একই পরিবারের তিন সদস্যকে প্রায় চার কেজি ওজনের ১০টি সোনার বারসহ আটক করে শুল্ক কর্মকর্তারা।
তারা হলেন আবিদা সুলতানা (৩৩), তার স্বামী মাঈন উদ্দিন (৪২) ও তাদের ৫বছরের সন্তান মুজাক্কির মঈন। কুয়ালালামপুর থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে তারা ঢাকা আসেন। আর গত ১২ এপ্রিল শাহজালাল বিমানবন্দরে কুয়ালালামপুর থেকে আসা পলি রানী দাস নামে এক নারীর কাছ থেকে সাড়ে ৪ কেজি স্বর্ণ জব্দ করে ঢাকা কাস্টমস হাউজ কর্তৃপক্ষ। চলতি বছলের ৩০ মার্চ শাহজালালে কুয়ালালামপুর থেকে আসা মাহমুদা হোসেন নামের এক নারীর কাছ থেকে আড়াই কেজি স্বর্ণ জব্দ করে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর।
এবছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি যশোরের বেনাপোল সীমান্তে ভারতে পাচারের সময় রোকেয়া বেগম নামে এক নারীর কাছ থেকে প্রায় এক কেজি স্বর্ণ জব্দ করে বিজিবি। আর গত ১০ আগষ্ট দুপুরে হযরত শাহজালাল আর্ন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সাড়ে ৭ কেজি স্বর্ণসহ জোসনা আক্তার ও জেরিন বেগম নামে দুই নারীকে আটক করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। স্বর্ণগুলো তাদের কোমরের বেল্টে লুকানো ছিল বলে জানা গেছে। তারা চট্টগ্রাম থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফাইটে (বিজি-০০২) ঢাকায় আসেন। যার আনুমানিক বাজারমূল্য পৌনে চার কোটি টাকা হবে বলে জানা গেছে।
বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মতে এরা সকলেই চেরাই পন্যের বাহক মাত্র। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাসুম নামের এক ব্যক্তি জানান, তিনি নগরীর অভিজাত এলাকায় খোঁজতে গিয়ে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি তাকে দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালয়শিয়া ভ্রমন করার পস্তাব দেন। তার প্রস্তাব শুনে প্রথমে পুলকিত হন। এরপর তাকে প্রতি মাসে ২ থেকে ৩ বার ওই সবদেশে খালি হাতে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। তাকে সেখানে গিয়ে নির্দিষ্ট ব্যাক্তির সঙ্গে সাক্ষাত করতে হবে। এরপর ওই ব্যক্তি তিনটি করে লাগেজ দিবে। আর ওই লাগেজগুলো তাদের হাতে পাওয়ার পর ৫০হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। পরে তাকে বলা হয়, ওই লাগেজগুলোকে চোরাচালানি মালামাল থাকবে।
এরপর তিনি তার প্রস্তাবে রাজী হননি। কিন্তু যারা বিদেশ থেকে স্বর্ন, সিগারেট, কসমেটিকসসহ মূল্যবান সামগ্রী অবৈধভাবে বহন করছেন। তার বিনিময়ে তারা মোটা অঙ্কের টাকা পড়েছেন। আবার অনেকেই এই চোরাকারবারির কাজ করতে গিয়ে গোয়েন্দাদের জালে ধরাও পড়ছেন। ঢাকা কাস্টমস হাউজের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আন্তর্জাতিক চোরাচজালানি চক্র প্রতিনিয়ত কৌশল বদল করছে। স্বর্ণ চোরাচালানে পাচারকারীরা নারী ও শিশুদের ব্যবহার করছে। এজন্য এখন চোরাচালানী পন্য পাচারকারীদের সনাক্ত করতে হচ্ছে।