আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের চতুর্থ বাজেট ঘোষণা করা হচ্ছে আজ। এটি হবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের পূর্ণাঙ্গ বাজেট। শেখ হাসিনা সরকারের টানা দ্বিতীয় মেয়াদের চতুর্থ বাজেট হলেও এটি হবে অর্থমন্ত্রীর টানা নবম বাজেট। এর আগে আবুল মাল আবদুল মুহিত এরশাদ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে ১৯৮২-৮৩ ও ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরের জন্য দুই বার জাতীয় বাজেট পেশ করেছিলেন।
জানা গেছে, এবার বাজেটের সম্ভাব্য আকার হতে পারে চার লাখ দুইশ ৬৬ কোটি টাকা। এ বছর ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (এনইসি) অনুমোদন করা হয়েছে।
সামনের বছর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে এবার পরিধি বাড়ানো হতে পারে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের সুবিধাভোগীদের জন্য। একইসঙ্গে বাড়ানো হবে এ খাতের বরাদ্দ। উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে এবারের বাজেটে গুরুত্ব পাচ্ছে সরকারের অবকাঠামো উন্নয়ন, গ্যাস ও বিদ্যুৎ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য সামাজিক ও মানবসম্পদ উন্নয়ন।
এ বছর বাজেটে বেশি বরাদ্দ পাবে বিদ্যুৎ খাত। একইভাবে গুরুত্ব পাবে মানবসম্পদ খাত। উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ রাখা হবে পদ্মা সেতুসহ সরকারের মেগা প্রকল্প খাতে। তবে বাড়ানো হতে পারে ব্যক্তিখাতের করমুক্ত আয়সীমা। বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টায় জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট করা হয়েছে জিডিপির ১৭ শতাংশ হারে। বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ৫ শতাংশ। রেওয়াজ অনুযায়ী সংসদে উপস্থাপনের আগে সংসদ ভবনের কেবিনেট কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব্য মন্ত্রিপরিষদের বিশেষ সভায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন করা হবে।
রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ আগে থেকেই সংসদ ভবনস্থ নিজ দফতরে বসেই মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদিত প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাক্ষর করবেন। এর পরেই সংসদে তা উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাজেটের মূল দলিলপত্র সঙ্গে নেওয়ার জন্য প্রথা অনুযায়ী এরই মধ্যে কালো ব্রিফকেস কেনা হয়েছে। চিকিৎসকরাও বারবার অর্থমন্ত্রীর শরীরের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন বলে পাবিারিক সূত্রে জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গুরুত্বপূর্ণ আট মেগা প্রকল্পের সঙ্গে এবার এডিপিতে যুক্ত হয়েছে কিছু নতুন প্রকল্প। নতুন বাজেটে সরকারের নানা চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ থাকছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন।
যদিও এর হার কত হবে, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা শেষ না হওয়া পর্যন্ত। আরও রয়েছে— রাজস্ব খাতে পরিকল্পিত সংস্কার কার্যক্রমগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, পদ্মা সেতুসহ সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর জন্য অর্থ সরবরাহ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি উৎপাদন বৃদ্ধি, কৃষি ও খাদ্যখাতে ভর্তুকিসহ কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় হ্রাস।
এছাড়া, জ্বালানি খাতে স্বয়ংক্রিয় মূল্য সমন্বয় প্রদ্ধতি বাস্তবায়ন, মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখা, বিদেশি অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধি, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ এবং বৈদেশিক মুদ্রার কাঙ্ক্ষিত স্তর এবং বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখাও আগামী বাজেটের অন্যতম চ্যালেঞ্জ বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানানো হয়েছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী এবারের বাজেটে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ।
সদ্যসমাপ্ত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। এ বছর তা বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ, যা সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারিত রয়েছে। গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের নিচে রাখার ঘোষণা দেওয়া হতে পারে প্রস্তাবিত বাজেটে।