মালয়েশিয়ায় গত ১৪ বছরে ৩ হাজার ৫৪৬ জন বাংলাদেশি সেকেন্ড হোম গড়ে তুলেছেন। এদের কেউই বৈধভাবে অর্থ স্থানান্তর করেননি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই দেশের বাইরে টাকা নেয়া হয়েছে। আইনগতভাবে এভাবে টাকা নিয়ে যাওয়ার সুযোগও নেই। তাই এ টাকার পুরোটাই পাচার করেছে এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ আমলা, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও বেশ কয়েকজন সুপরিচিত গণমাধ্যমকর্মী।
তারা হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করা টাকায় মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম বা দ্বিতীয় আবাসস্থল গড়েছেন। এতে দেশ থেকে পাচার হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪২ হাজার কোটি টাকা। আরও ৪ হাজার ৮০৪ জন সেকেন্ড হোমের আবেদন করে অপেক্ষায় রয়েছেন।
সেকেন্ড হোমের আবেদন করতে হলে মালয়েশিয়ার মুদ্রায় ৫ লাখ রিঙ্গিত বা টাকার অঙ্কে প্রায় ১ কোটি টাকা আগে জমা দেখাতে হয়। এ হিসাবে আরও প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা চলে গেছে। সব মিলিয়ে শুধু সরল হিসাবেই দেশটিতে পাচার হয়েছে ৪৭ হাজার কোটি টাকা।
এ ছাড়া যারা ইতিমধ্যে সেকেন্ড হোম গড়ে তুলেছেন, তাদের অনেকে সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য ছাড়াও একাধিক ফ্ল্যাট কিনেছেন। বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছেন বিভিন্ন খাতে। এর ফলে দেশ থেকে মালয়েশিয়ায় টাকা পাচারের অঙ্ক আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মালয়েশিয়ার পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিচালিত এমএম২এইচ (মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম) প্রোগ্রামে দেশটির ২৩৮টি এজেন্টের বাইরে অনুমোদিত এজেন্ট নেই। এসব এজেন্টের মাধ্যমে সেকেন্ড হোমের আবেদন করতে হয়। কিন্তু দিন দিন এর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকায় এমএম২এইচের সাব-এজেন্টের সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের সাব-এজেন্টের সংখ্যাই বেশি।
এ ধরনের একাধিক সাব-এজেন্টের সঙ্গে কথা বলে যুগান্তরের মালয়েশিয়া প্রতিনিধি আহমাদুল কবির জানান, বর্তমানে মালয়েশিয়ায় সরকার নির্ধারিত ফি দিয়ে সেকেন্ড হোম সুবিধা নেয়া যায় না। সরকার নির্ধারিত ফি’র সঙ্গে এজেন্ট ফিসহ যাবতীয় খরচ হিসাব করলে একজনের প্রকৃত ব্যয় দাঁড়ায় ১২ কোটি টাকার ওপরে।
এ হিসাবে সেকেন্ড হোম গড়তে হুন্ডির মাধ্যমে দেশ থেকে সাড়ে তিন হাজার বাংলাদেশি প্রায় ৪২ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা পাচার করেছেন। এ ছাড়া আবেদন করে সেকেন্ড হোমের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছেন ৪ হাজার ৮০৪ জন। তারা যদি লবিস্ট ফার্মকে এখন পর্যন্ত টাকা না দিয়ে থাকেন, তাহলেও ফরম পূরণের শর্ত হিসেবে দেশটিতে ব্যাংক হিসাব খুলে কমপক্ষে প্রত্যেকে ১ কোটি টাকা করে জমা রেখেছেন। সেকেন্ড হোম সুবিধার প্রাথমিক অনুমোদন না মিললে এ টাকা বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে।
এদিকে ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট, ১৯৪৭-এর ৫(১) ধারা অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কেউই দেশ থেকে টাকা বিদেশে পাঠাতে পারেন না। অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে কোনো অর্থ বিদেশে নিয়ে বিনিয়োগ করার আইনগত কোনো বৈধতা নেই। কিন্তু শুধু মালয়েশিয়া নয়, লন্ডন, সিঙ্গাপুর, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও দুবাইয়ে বাংলাদেশের কয়েক হাজার লোক বাড়ি ও ফ্ল্যাট কেনা থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্যে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন।
কেউ কেউ অনুমান করে বলেন, যার পরিমাণ কয়েক লাখ কোটি টাকা। এভাবে যারা সম্পদ কিনেছেন, তার পুরোটাই পাচার ও অবৈধ। এ বিষয়গুলো অনেকটা ওপেন সিক্রেট। পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত না পাওয়ার কারণে দেশের গণমাধ্যমগুলো সেভাবে বিস্তারিত প্রকাশ করতে পারে না। তবে মাঝেমধ্যে বিদেশি কয়েকটি গণমাধ্যম পরিসংখ্যান কিংবা কারও কারও সম্পদ কেনার তথ্য ছবিসহ প্রকাশ করেছে।