প্রযুক্তি বিশ্বে বর্তমানে বেশ সুপরিচিত একটি নাম রয়া মাহবুব। আফগান শরণার্থী হিসেবে রয়া বড় হয়েছিলেন ইরানে।
মাত্র ২৩ বছর বয়সে আফগানিস্তানের প্রথম নারী হিসেবে একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী হিসেবে কাজ শুরু করেন। তবে তার সফল হওয়ার পেছনের পথটি কিন্তু খুব মসৃণ ছিল না।
সেসময় তার জন্য কম্পিউটার কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার ছিল স্বপ্নের মতো। তার কাছে তখন কম্পিউটারকে মনে হতো একটি ছোট বাক্স যার মধ্যে সব তথ্য রয়েছে, সব বই এতে পাওয়া যায় আর এর মাধ্যমে মানুষের সাথে কথাও বলা যায় যারা কখনও তার অবস্থান জানতেও পারবে না।
২০০৩ সালে তিনি প্রথম এই বাক্সের দেখা পান। তখন সবেমাত্র তার পরিবার ইরান ছেড়ে পুনরায় আফগানিস্তানে পাড়ি জমিয়েছে। পরবর্তীতে তিনি কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক সম্পন্ন করে হেরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি কোঅর্ডিনেটর হিসেবে কাজ শুরু করেন।
এসময় নারীদের প্রযুক্তি শিক্ষায় আগ্রহী করতে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানও দাঁড় করান তিনি। এরই স্বীকৃতি হিসেবে টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় ঠাই করে নেন রয়া।
২০১০ সালে তার বোন এলাহাকে সাথে নিয়ে প্রতিষ্ঠান করেন আফগান সিটাডেল সফটওয়্যার নামের একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। হেরাত ভিত্তিক হলেও কাবুলে একটি শাখা ছিল প্রতিষ্ঠানটির।
২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে নারী কর্মীর সংখ্যা ৭০ শতাংশে উন্নীত হয় যাদের মধ্যে ছিল প্রোগ্রামার এবং ব্লগার।
তবে আফগানিস্তানের মতো একটি দেশে সেসময় নারীদের জন্য বাইরে গিয়ে কাজ করাটা ছিল বেশ চ্যালেঞ্জের। তাছাড়া পেশাগত কারণে মার্কিন সেনাবাহিনীর সাথেও কাজ করতে হতো তাকে। সব মিলিয়ে তিনি অল্পদিনেই তালেবানের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। এর পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলোও তাকে হুমকি হিসেবে দেখত।
একসময় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন গুজব ছড়ানো শুরু হলো। তাকে ‘মার্কিন চর’ হিসেবেও আখ্যা দেওয়া হলো। সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে নিয়মিত পাওনা না পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতন দেওয়াও কঠিন হয়ে পড়ল।
এ সময় তিনি আফগানিস্তানের বাইরে থেকে বিনিয়োগ পাওয়ার চেষ্টা শুরু করলেন। একটি ডকুমেন্টারিতে তার সম্পর্কে জানতে পেরে ফ্রান্সেসকো রুলি নামের একজন বিনিয়োগকারী আফগান সিটাডেল সফটওয়্যার কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন।
ক্রমাগত হুমকির মুখে ২০১৪ সালে আফগানিস্তান ত্যাগ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে পাড়ি জমান রয়া মাহবুব। তবে এখান থেকেই তিনি আফগানিস্তানে তার প্রতিষ্ঠান দেখাশোনা করেন।
আফগানিস্তানের মেয়েদের প্রযুক্তিতে দক্ষ করে গড়ে তুলতে ডিজিটাল সিটিজেন ফান্ড চালু করেছেন যার মাধ্যমে দেশজুড়ে চালু করেছেন ১৩টি ডিজিটাল সেন্টার। এখান থেকে প্রযুক্তি শিক্ষা দেওয়া হয়েছে ৯ হাজারের বেশি নারীকে।