যাত্রী বা পণ্যবাহী বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ সহজ কাজ নয়। দুর্ঘটনার আশঙ্কা এড়াতে সেগুলির নিয়মিত ও বিস্তারিত পরীক্ষার প্রয়োজন। জার্মানির ফ্রাংকফুর্ট ও হামবুর্গ শহরে এমন জটিল কাজের জন্য এলাহি ব্যবস্থা রয়েছে। বিশাল মাপের বিমান এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ করে। প্রযু্ক্তির ব্যাপক প্রয়োগের মাধ্যমে অবিরাম পরিবহণের এই প্রক্রিয়া নিরাপদ রাখা হয়। ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরে ‘লিমা চার্লি ইন্ডিয়া’ নামের পণ্যবাহী বিমান অবতরণ করেছে। প্রায় ৭,২০০ ঘণ্টা ওড়ার পর বোয়িং এমডি১১ মডেলের বিমানটির খোলনলচে পরীক্ষা করতে হবে। এমন খুঁটিনাটি পরীক্ষার মাধ্যমেই বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। লুফৎহানসা বিমান সংস্থার বিশাল হ্যাঙারের মধ্যে মিস্ত্রীরা প্রায় ৫,০০০ ঘণ্টা ধরে প্রত্যেকটি যন্ত্রাংশ খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেন। সীমিত সময়ের মধ্যে সব কাজ শেষ করতে হয়। বিমানের ডানার ফ্ল্যাপগুলির দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়। ঘণ্টায় ৩০০ কিলোমিটার বেগে এই বোয়িং পরিবহণ বিমানটি অবতরণ করে, যা বেশিরভাগ বিমানের তুলনায় অনেক বেশি। সে সময়ে বিমানের কোনো অংশের ক্ষতি হলে চলবে না। অবতরণের সময়ে পিছনের ইঞ্জিনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সবকিছু নিখুঁতভাবে চললে ইঞ্জিনিয়াররা সন্তুষ্ট হন। অলিভার গেবাউয়ার এই বিমানের রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে সমন্বয়ের কাজ করেন। তিনি বলেন, এমডি-১১ এক থ্রি-জেট বিমান। লুফৎহানসা কার্গো এটিকে পরিবহণের কাজে লাগায়। একে ‘আকাশের রানি’ বলা হয়। বিশাল আকারের এই বিমান অনেক মালপত্র নিয়ে দীর্ঘ দূরত্ব পাড়ি দিতে পারে।হামবুর্গ শহরে লুফৎহানসা কোম্পানির কারিগরি শাখার হ্যাঙারে এয়ারবাস ৩৪০ বিমানের আপাদমস্তক রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে। ছ’বছর আগে প্রথম উড়ালের পর থেকে ‘গল্ফ ট্যাংগো’ নামের এই যাত্রীবাহী বিমান ২ কোটি কিলোমিটারের বেশি যাত্রা করেছে। বিমানটি এখনো ‘ফিট’ আছে কিনা, তা জানতে অনেক পরীক্ষা করতে হবে। বিশ্বের অন্য কোথাও এমন ব্যবস্থা নেই। এখানে ইঞ্জিনগুলিকে পূর্ণ শক্তিতে চালানো হয়। দেখা গেলো, এই বিমানের ইঞ্জিন ভালোভাবেই চলছে। তেলের ট্যাংকের মধ্যে একটা ফাটল শনাক্ত করা গেছে। সেটি দ্রুত মেরামত করতে হবে। বিমানের মিস্ত্রী ওলাফ সিব কাজে নেমে পড়েছেন। বেশ কসরত করে ট্যাংকের মধ্যে প্রবেশ করতে হয়। এমন কাজের পরিবেশ সহজ নয়। যে আধারে কয়েক টন এভিয়েশন ফুয়েল ভরা হয়, সেখানে মিস্ত্রীদের অতি সাবধানে কাজ করতে হয়। বাতাস তেলের বাস্পে ভরা, অতএব বিস্ফোরণের আশঙ্কা রয়েছে। বিমানের মিস্ত্রী ওলাফ সিব বলেন, ট্যাংকের মধ্যে এমন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হয়, যা বিস্ফোরণ ঘটাবে না। যেমন উপরে বিশেষ ধরনের বাতি জ্বলছে। যে কোনো আলো নিয়ে ট্যাংকে নামা চলে না।ফাটলের মেরামতির কাজ শেষ। কোনো বিপদ ঘটেনি। এদিকে ফ্রাংকফুর্টের হ্যাঙারে আট দিন ধরে বিস্তারিত রক্ষণাবেক্ষণের পর পরিবহণ বিমানটি আবার উড়ালের জন্য প্রস্তুত। শেষ বার সব যন্ত্রাংশ পরীক্ষা করে সব স্টিকার দূর করা হচ্ছে।