যেসব কারণে বিস্ফোরণ ঘটে স্মার্টফোনের ব্যাটারিতে
বর্তমান সময়ে স্মার্টফোনে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি। এর বাইরে ইলেকট্রিক গাড়ি এবং বিমানেও আছে এর ব্যবহার। অন্যান্য ব্যাটারির তুলনায় লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি বেশ নিরাপদ হওয়ায় এর ব্যবহার বাড়ছে সবক্ষেত্রেই।
তবে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিতে একেবারেই যে বিস্ফোরণ ঘটে না তা নয়। যেমন স্যামসাং গ্যালাক্সি নোট ৭ ফোনটির ব্যাটারিতে বিস্ফোরণের ঘটনা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছিল যে শেষ পর্যন্ত ফোনটি সবখান থেকে নিষিদ্ধই করা হলো। এছাড়া কিছুদিন আগে এইচপি তাদের বেশ কয়েকটি মডেলের ল্যাপটপে ব্যাটারি সমস্যার কথা জানিয়েছে। মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন ফোনের ব্যাটারি বিস্ফোরণের খবরও পাওয়া যায়।
লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিতে কেন বিস্ফোরণ ঘটে তা জানতে হলে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির গঠন সম্পর্কে জানতে হবে। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির দুটি ইলেক্ট্রোড থাকে- একটি ধনাত্মক আয়নের ক্যাথোড, অন্যটি ঋণাত্মক আয়নের অ্যানোড। দুটি অংশকে আলাদা করে রাখে খুবই পাতলা একটি প্লাস্টিক পর্দা।
লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি যখন চার্জ দেওয়া হয়, তখন ক্যাথোড থেকে ইলেক্ট্রোলাইট বা লিথিয়াম আয়নগুলো বল প্রয়োগের কারণে অ্যানোডের অংশে ধাবিত হয়। একইভাবে ব্যাটারির চার্জ যখন খরচ হতে থাকে বা কমতে থাকে, তখন একেবারে উল্টা ঘটনা ঘটে। লিথিয়াম আয়ন তখন অ্যানোড থেকে ক্যাথোডের দিকে ছুটতে থাকে।
সাধারণত ছোট ব্যাটারি বিশেষ করে স্মার্টফোন ব্যাটারিতে লিথিয়াম আয়নের একটি সেল থাকে। ল্যাপটপ ব্যাটারি বা অন্য বড় ব্যাটারিতে ৬ থেকে ১২টি পর্যন্ত লিথিয়াম আয়ন সেল থাকতে পারে। ইলেকট্রিক গাড়ি বা বিমানের ব্যাটারিতে শতাধিক লিথিয়াম আয়ন সেল ব্যবহার করা হয়।
কেন বিস্ফোরণ ঘটে
যে কারণে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি এতো কাজের, সেই একই কারণেই এ ধরনের ব্যাটারিতে বিস্ফোরণ ঘটে। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি বিদ্যুৎশক্তি সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে অতুলনীয়। সঞ্চিত বিদ্যুৎ যখন ধীরে ধীরে খরচ হয়, তখন ব্যাটারিটি নিরাপদ। কিন্তু লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি যদি একবারেই এর সঞ্চিত সমস্ত বিদ্যুৎশক্তি ছেড়ে দিতে চায়, তখনই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। যখন ব্যাটারির ভেতরে অ্যানোড এবং ক্যাথোডকে আলাদা করে রাখা পাতলা পর্দা কাজ না করায় কিংবা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অ্যানোড এবং ক্যাথোড পরস্পর যুক্ত হয়ে যায়, তখন ব্যাটারি গরম হতে থাকে। এর ফলে শর্ট সার্কিট হয়ে ব্যাটারিতে আগুন ধরে যায় এবং বিস্ফোরণ ঘটে।
বেশ কিছু কারণে অ্যানোড ও ক্যাথোডকে পৃথক করে রাখা পাতলা প্লাস্টিক পর্দাটিতে সমস্যা হতে পারে। এর মধ্যে আছে-
ডিজাইন ও উৎপাদনজনিত সমস্যা
ব্যাটারি ডিজাইনে যদি গণ্ডগোল থাকে, সেক্ষেত্রে ব্যাটারির দুটি ইলেক্ট্রোড এবং পৃথক করে রাখা পর্দার মাঝে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় এ সমস্যা হতে পারে। চার্জ দেওয়ার পর ব্যাটারির ইলেক্ট্রোড কিছুটা বাঁকানোর ফলে শর্ট সার্কিট হয়েও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে। ডিজাইনে সমস্যা না থাকার পরও শুধুমাত্র উৎপাদনজনিত সমস্যার কারণেও এমন হতে পারে।
বাহ্যিক প্রভাব
বাইরের তাপমাত্রা খুব বেশি হলেও ব্যাটারি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে। ব্যাটারি বা ফোন বারবার হাত থেকে ফেললে বা ব্যাটারিতে বাইরের কোনো আঘাতের কারণেও মধ্যবর্তী সেপারেটর ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
চার্জারে সমস্যা
চার্জারে ত্রুটির কারণেও লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে যা থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিতে বাড়তি চার্জ প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থা থাকে। তবে কোনো কারণে এক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে বাড়তি চার্জের কারণে ব্যাটারি গরম হয়ে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এজন্য চার্জ দেওয়া সম্পন্ন হলে ফোন চার্জার থেকে খুলে ফেলতে হবে। এছাড়া ফোনের অরিজিনাল চার্জার ছাড়া নিম্নমানের চার্জার দিয়ে ফোন চার্জ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।