News Bangla 24 BD | ঝিনাইদহ থেকে ধিরে ধিরে উধাও হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মসলা বাটা’শীল-পাটা-নুড়া
News Head

ঝিনাইদহ থেকে ধিরে ধিরে উধাও হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মসলা বাটা’শীল-পাটা-নুড়া


জাহিদুর রহমান তারিক,ঝিনাইদহঃ
ঝিনাইদহ থেকে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে মসলা বাটা ‘শীল-পাটা-নুড়া’-এ নামগুলো অনেকের কাছে পরিচিত আবার নতুন প্রজন্মের কাছে কিছুটা হলেও অপরিচিত। আর অপরিচিত হওয়ার কারণে হিসেবে দেখা যায় যে, বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে এগুলোর ব্যবহার কমে যাচ্ছে কারন আধুনিক প্রযুক্তির অত্যাধুনিক সরঞ্জাম তৈরীর জন্য। বাংলা ভাষায় ‘শীল-পাটা-নুড়া’ ছিল রান্নার মসলা বাটার অন্যতম সরঞ্জাম। যে কোন পরিবারের রান্না-বান্নার জন্য মসলা অপরিহার্য। আর মসলা বাটার জন্য ‘শীল, পাটা কিংবা নুড়া’র ব্যবহার ছিল প্রয়োজনীয় প্রধান সরঞ্জাম। বর্তমানে মসলা তৈরির জন্য অনেকেই আর এ ‘শীল-পাটা-নুড়া’ ব্যবহার করেন না। বাজার থেকে প্যাকেটজাত রেডিমেট গুড়া মসলা পাওয়া যাচ্ছে, কিংবা আধুনিকতার ছোয়ায় বিলিন্ডার মেশিনেও মসলা তৈরি করছেন গৃহিনী ও রাধুনীরা। রান্না-বান্নার ক্ষেত্রে যেকোন বাটা বা বাটনার ক্ষেত্রে এ ‘শীল-পাটা-নুড়া’র ব্যবহার ছিল গ্রাম্যঞ্চল থেকে শুরু করে শহরেও। আদা, রসুন, পেয়াজ, লবঙ্গ, এলাচ, ডালচিনি (দারুচিনি), গরম মসলা, সরিষাসহ সকল মসলা ও ঘেটকলসহ বিভিন্ন সবজিও বাটার জন্য ‘শীল ও নুড়া’য় হাত বুলাতে হতো। সাধারণত পাথরের তৈরি এ ‘শীল-নুড়া’র ঘর্ষনে মসলা হতো মিহি আর চমৎকার স্বাদপূর্ণ। সেক্ষেত্রে ‘শীল-নুড়া’য় ছোট ছোট গর্ত করে ‘ধার কাটানো’ থাকতো। মসলা তৈরি লক্ষ্যে ‘শীল ও নুড়া’য় ঘর্ষনে যখন সেই ‘ধার’ ক্ষয়ে যেতো তখন কয়েক মাস পর পর ওই ‘শীল-পাটা-নুড়া’য় ‘ধার কাটানো’ হতো। আর পেশায় নিয়োজিত ছিলো এক শ্রেণির মানুষ। তারা বাড়ি বাড়ি ঘুরে ‘শীলের ধার কাটাবেন নুড়ার ধার কাটাবেন’ বলে চিৎকার করে কাজ ‘শীল-নুড়া’য় ‘ধার কাটিয়ে’ তাদের পেশার স্বপক্ষে আয়-রোজগার করতেন। ‘শীল-পাটা-নুড়া’কাটানো কারিগররা নিপুন হাতে লোহার ছেনি-হাতুড়ি দিয়ে গৃহস্থলির ‘শীল, পাটা-নুড়া’র ‘ধার কাটাতেন’ চশমা পড়ে, চোখ বুজে, চোখে কাপড় বেধে কিংবা খালি চোখেও। বর্তমানে বিশ্বায়নের আধুনিক যুগে অধিকাংশ গৃহবধূরা রান্নার ক্ষেত্রে মসলা বাটেন বা মিহি করেন বিলিন্ডার মেশিনে কিংবা বাজার থেকে কেনা প্যাকেটজাত মসলা দিয়ে। ফলে কমে এসেছে ‘শীল-পাটা-নুড়া’র ব্যবহার। কয়েক বছর আগেও এমন চিত্র সচারচর দেখা মিললেও এখন তেমনটা আর দেখা মেলে না। তবু এ পেশার ‘কিছু মানুষ’ তাদের পেশা ছাড়েন নি। অনেক গৃহিনী কিংবা রাধুনিরাও ‘শীল-পাটা-নুড়া’র ব্যবহার ছাড়েন নি। ভবিষ্যতে হয়তো বা আর এই কারিগরদের দেখা মিলবে না, খুঁজে পাওয়া যাবে না ‘শীল-পাটা-নুড়া’ও। আজকের শিশুদেরও ভবিষ্যতে হয়তো এগুলো সম্বন্ধে অজানা থাকতে পারে। হয়তো স্মৃতি হয়ে বেঁচে থাকবে আজকের এই ‘শীল-পাটা-নুড়া’ ও এর কারিগররা। তবে কালের বিবর্তনে যতই মিলিয়ে যাক না কেন এগুলো ধরে রাখারও চেষ্টাও থাকবে অনেকের। এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের। তা না হলে এই শীল, পাটা-নুড়ার স্থান হবে কোন যাদুঘরে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ