কর্মব্যস্ত জাবি চারুকলা, চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রার কাজ
সাগর কর্মকার, জাবি প্রতিনিধি:
বাংলা ১৪২৫ সালকে স্বাগত জানানোর পালা। তাই তো বাঙালিমন আজ নাচতে শুরু করেছে আসন্ন নববর্ষের দোলায় দুলবে বলে। সমস্ত বাংলায় পান্তা-ইলিশের ঘ্রাণ ছড়াতে পথের ধারে বসতে শুরু করেছে ইলিশের পসরা। নববর্ষকে উপলক্ষ করে বিভিন্ন জায়গায় বসা মেলার কার্যক্রম কোথাও শুরু আবার কোথাওবা শেষের পথে। এতকিছুর পরও সবচেয়ে বড় বৈশাখী আয়োজক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিল্পীরা কি হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকার পাত্র? মোটেও না! বর্ষবরণকে ঘিরে প্রতিবছর সবচেয়ে আগে এরাই তোড়জোড় শুরু করে দেয়। এবারও তার ভিন্নতা হয়নি। বেশ কদিন আগ থেকেই চারুকলার শিক্ষার্থীরা শুরু করেছে বৈশাখী আয়োজন।
আর তাই আগেভাগেই বৈশাখী আমেজ উপভোগ করতে চারুকলার প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকেই চোখ গিয়ে পড়ল চারুকলার শিক্ষার্থীদের শৈল্পিক সব কাজকর্মের উপর। পাশাপাশি সারি করে টেবিল সাজিয়ে কেউ দিচ্ছিল তুলির আঁচড়, কেউবা ব্যস্ত কাদামাটির সরার উপর আলপনা আঁকাআঁকিতে। কিন্তু সবাই যেন নিজেকে উজাড় করে দিয়ে নববর্ষের পরশ বোলাচ্ছিল কাগজ, মাটি, এমনকি কাঠের বিভিন্ন পাত্র ও মুখোশের উপর।
সবাই যে রংতুলি, চুন-কাম, অথবা আঁকাআঁকির মধ্যে মেতে ছিল তা না , কেউ ব্যস্ত র্যালির জন্য বড় বড় মুখোশ তৈরির কাজে, কেউবা ডুবে বাঁশের চাটাই দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন ঢঙের কারুশিল্পের নমুনা বানানোর কাজে—যেগুলো বৈশাখের দিনই বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রার সাথে। যাহোক, বিভিন্ন রঙের ঢঙের বৈশাখী জিনিসপত্র তৈরি এবং তার উপর শৈল্পিক ছোঁয়া দিয়ে দেওয়া পর্যন্তই শেষ কাজ না চারুকলার এসব কারিগরদের। ঐতিহ্যবাহী এসব জিনিসপত্র প্রদর্শন ও বিক্রির কাজেও এই কারিগরেরাই।মাটির সরায় কাজ করছে চারুকলার শিক্ষার্থী সোহাগ তিনি জানালেন এর নির্দ্দিষ্ট কোন থিম নেই, তবে বেশির ভাগ সরার ডিজাইন লোকজ সংস্কৃতির গ্রামীণ জীবন এবং আবহমান বাংলা ঐতিহ্যর উপরে। পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা যে কয়টি প্রচলিত আইটেম এর মধ্য রয়েছে মুখোশ, সরা আর কিছু প্রাণীর প্রতিলিপি ।
থাক সে কথা, চারুকলার বর্ষবরণের কার্যক্রম সম্পর্কে জানালো শিক্ষার্থী মাসুম ‘বৈশাখ উপলক্ষে চারুকলার শিল্পীরা দুইটা পর্যায়ে কাজকর্ম করেন। যদিও মুখ্য উদ্দেশ্য একটাই, সেটা হচ্ছে র্যালি।
চারুকলা বিভাগের শিক্ষক কাজী মোঃ মহসিন জানালেন, বাঙালির সংস্কৃতিকে সমস্ত বিশ্বের কাছে উপস্থাপন করার সবচেয়ে বড় সুযোগ বাঙালির এই পহেলা বৈশাখ। বাঙালি জাতির প্রাণের উৎসব এটি। তাই তো সমস্ত বাঙালিকে প্রাণের উচ্ছ্বসে ভাসাতে ও বাঙালির বর্ষবরণ রেওয়াজকে সমুন্নত রাখতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এই বৈশাখী আয়োজন।
চারুকলা বিভাগের চেয়ারম্যান ময়েজ উদ্দীন জানালেন, রাত-দিন নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের তৈরি নানা জিনিস বিক্রি করেই হচ্ছে পহেলা বৈশাখের আয়োজন। আর এই আয়োজন বাঙালির ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক।