সারাদেশে ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পবিত্র ঈদ-উল-আজহা উদযাপিত হচ্ছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদও পৃথক বার্তায় দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। রাজধানীসহ সারা দেশে বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা হয়েছে।
সকাল আটটায় রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত শুরু হয়। দেশের প্রধান এ ঈদ জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ এহসানুল হক। বিকল্প ইমাম হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকার মিরপুরের জামেয়া আরাবিয়া আশরাফিয়ার মুহতামিম মাওলানা সৈয়দ ওয়াহিদুযযামান।
ঈদের নামাজ আদায় শেষে মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহ লাভের আশায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা সামর্থ্য অনুয়ায়ী নিজ নিজ পশু কোরবানি শুরু করেছেন।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে এবারও ৫টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথম জামাত হয় সকাল ৭টায়। দ্বিতীয় জামায়াত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৮টায়। তৃতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৯টায়। এর পর আরও ২টি জামাত হবে যথাক্রমে ১০টা ও পৌনে ১১টায়।
ঈদ জামায়াতে মুসুল্লিদের সুবিধার্থে নিরবিচ্ছিন্ন বিদুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এজন্য বিদ্যুৎ সংযোগ ও জেনারেটরের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
জাতীয় ঈদগাহে একসঙ্গে প্রায় এক লাখ মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। প্রায় ৫ হাজার নারী মুসল্লি ঈদ নামাজে অংশ নিয়েছেন। পুরুষ ও নারী মুসল্লিদের জন্য নামাজের পূর্বে পৃথক অযুর স্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একসঙ্গে ১৫০ জন পুরুষ মুসল্লি এবং ৫০জন নারী মুসল্লি একসঙ্গে অযু করতে পারেন সেখানে।
ডিএসসিসির সৌজন্যে রাস্তায় নামাজ আদায়কারীদের পানির চাহিদা মেটানোর জন্য প্রথমবারের মতো এবার ঈদগাহ ময়দানের বাইরেও বোতলজাত পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও বজ্রপাত প্রতিরোধক যন্ত্র বসানো হয়েছে। একইসঙ্গে জরুরী টেলিফোন বুথ ও পর্যাপ্ত গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যাতে ঈদের নামাজ আদায় করতে এসে কোন মুসল্লি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে তাৎক্ষনিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়। জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাতে মহিলাদের অংশ নেওয়ার জন্য আলাদা প্রবেশপথ ও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে আজ কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের সব কারাগার, সরকারি হাসপাতাল, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম, শিশুসদন, ছোটমণি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র, সেফ হোমস, দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্র এবং শিশু ও মাতৃসদনগুলোতে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে এবার রাজধানীতে ঈদের ৪০৯টি জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে এসব ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়েছে।
সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দুই সিটিতে প্রতি ওয়ার্ডের মসজিদ, মাঠ ও ঈদগাহে ৪টি বা ৫টি করে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদুল আজহার জামাতের আয়োজন করা হয়েছে। এখানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, জাতীয় সংসদের হুইপ, সাংসদ ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এলাকার মুসল্লিরা জামাতে অংশ নেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামিআয় ঈদের দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৮টায় এবং দ্বিতীয় জামাত হয় সকাল ৯টায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল মেইন গেইট-সংলগ্ন মাঠে সাড়ে ৭টায় ও ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল লনে সকাল ৮টায় পৃথক দুটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
এ ছাড়া রাজধানীর আরামবাগে দেওয়ানবাগ শরিফে ঈদের ৩টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথমটি সকাল ৮টা, দ্বিতীয়টি সকাল সাড়ে ৯টা অনুষ্ঠিত হয়। শেষ জামাত সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতিবছরের মতো এবারও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের বৃহত্তম ঈদের জামাত সকাল ৯টায় শুরু হয়। এই জামাতে ইমামতি করেন শহরের মার্কাস মসজিদের ইমাম মাওলানা হিফজুর রহমান। এটি শোলাকিয়ার ১৯১তম ঈদুল আজহার জামাত।
ঈদ উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে তিন দিনের সরকারি ছুটি। তবে এ সপ্তাহের শেষ দুদিন শুক্র ও শনিবার হওয়ায় ছুটি দাঁড়িয়েছে পাঁচ দিনে।