টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি কাজে যোগ দিয়েছে প্রায় ৫০ হাজার মুসল্লি
টঙ্গী : টঙ্গীর কহর দরিয়া খ্যাত তুরাগ নদীর তীরে চলছে বিশ্ব ইজতেমা প্রস্ততির কাজ। প্রস্তুতি কাজে অংশ নিয়েছেন প্রায় ৫০ হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি বলে দাবী ইজতেমা আয়োজক কমিটির মুরব্বীদের। মুরব্বীরা জানান, আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা। অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব ইজতেমাকে সামনে রেখে প্রায় ৫০ হাজার মুসল্লির উপস্থিতিতে ময়দানের প্রস্তুতি কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। প্রতি বছর ৩দিন করে দুই দফায় ইজতেমা অনুষ্ঠিত হলেও এবারই প্রথম ২দিন করে বিরতিহীনভাবে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি তাবলীগ জামায়াত বাংলাদেশের শীর্ষ মুরুব্বি ও কাকরাইল জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা জোবায়ের আহমেদের অনুসারী মুসল্লিরা অংশ নিবেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি শনিবার দুপুরে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়ে আগত মুসল্লিরা রাতের মধ্যে ময়দান ত্যাগ করবেন। পরে মাওলানা সা’দ আহমাদ কান্ধলভী পন্থী অনুসারী মুসল্লিরা ১৭ ফেব্রুয়ারি রোববার বাদ ফজর থেকে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় অংশ নিবেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি মধ্যাহ্নের পূর্বে যেকোনো এক সময় আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমার। ইজতেমা কার্যক্রম শেষে জিম্মাদারগণ ময়দানের দায়িত্ব প্রশাসনের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে যাবেন। গতকাল রোববার সরজমিনে ইজতেমা ময়দান ঘুরে দেখা যায়, ইজতেমাকে সামনে রেখে এগিয়ে চলছে প্রস্তুতির কাজ। স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্রসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রায় ৫০ হাজার মুসল্লি স্বেচ্ছাশ্রমে ময়দানে প্যান্ডেল তৈরির কাজ, রাস্তা মেরামত, মাইক টানানো, টয়লেট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ময়দানের আগাছা পরিষ্কারের কাজ করছেন আগত মুসল্লিরা। ইতোমধ্যে ময়দানের প্রায় ৬৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটি দাবী। ইজতেমা উপলক্ষে ময়দানের পশ্চিম পাশে বিদেশী মেহমানদের জন্য তৈরি টিনসেট সংলগ্ন পঁশ্চিম কোনে লোহার পাইপ দিয়ে মঞ্চ তৈরির কাজও চলছে দ্রুত গতিতে। বিদেশী মেহমানদের জন্য টিন দিয়ে তৈরি তাঁবুতে বিগত বছরে ন্যায় এবারও পাকা টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। তাদের সুবিধার্থে তাবুঁগুলো উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আরও আরামপ্রদ করে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজক কমিটি। ইজতেমা চলাকালে ময়দানে আগত মুসল্লিদের উচ্ছিষ্ট ময়লা ফেলার জন্য ময়দানের চারপাশে রিংয়ের তৈরি পোর্টএ্যাবল ডাস্টবিন স্থাপন করা হচ্ছে। যাতে ময়লা আর্বজনা যেখানে সেখানে না ফেলে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতে পারে।টঙ্গীর নতুনবাজার এলাকার ব্যবসায়ী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, ২৫জনের একটি দল নিয়ে ময়দানে কাজ করতে এসেছেন। তিনি বলেন, আল্লাহর মেহমানরা ইবাদত বন্দেগি করতে আসবেন। তারা যেন সুন্দরভাবে ইবাদত বন্দেগি করতে পারেন সেই দিক খেয়াল রেখে ময়দানের কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিবছরই আমরা বিশ্ব ইজতেমার মাঠ তৈরির কাজ করে থাকি। নরসিংদী থেকে আসা জব্বার মিয়া জানান, বিশ্বর বিভিন্ন দেশ থেকে বিদেশী মেহমানরা ইজতেমায় অংশগ্রহণ করবেন। তারা যেন সুন্দরভাবে ইবাদত করতে পারি সেজন্য তাদের কামরা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করছি।বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের (সাফাই) পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কমিটির জিম্মাদার ফকির আতাউর রহমান জানান, আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া ২০১৯ সালের বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে চলছে প্রস্তুতি কাজ। ইতোমধ্যে ময়দানের প্রায় ৬৫ ভাগের মতো কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ১৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরের আগে যেকোনো একসময় আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে ইজতেমা। তবে শুক্রবার থেকে ইজতেমা শুরু হলেও বৃহস্পতিবার বাদ ফজর থেকেই আগত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে আ’ম শুরু হবে। ময়দানের সার্বিক প্রস্তুতির কাজ করেছেন মুসল্লি¬রা। ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে একশ বিশ জনের একদল মুসল্লি¬ ময়দানে কাজ করতে দেখা গেছে। ময়দানে কাজ করতে আসা মুসল্লি আমজাদ হোসেন জানান, আল্ল¬াহকে রাজি খুশি করার জন্য ২০০১ সাল থেকে ইজতেমা মাঠে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছি। তারই ধারাবাহিকতায় এবারও ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের খেদমতের উদ্দেশ্যে মাঠে কাজ করতে এসেছি। যোগাযোগ করা হলে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের শীর্ষ মুরুব্বি ও সূরা সদস্য মাওলানা মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ময়দানের প্রস্তুতিকাজ শেষ করতে হাতে সময় খুবই কম। তাই ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ময়দানের প্রস্তুতির কাজ সম্পন্ন করতে আমরা এখন যুদ্ধাবস্থায় আছি। আমার সাথে মাওলানা মাহফুজুল ইসলাম, মাওলানা হাসনাত ও আবুল হাশেম রয়েছেন। আমরা চারজন সূরা সদস্য মাশোয়ারা করে ময়দানের প্রস্তুতিকাজ করছি। আশা করি, আগামী ১৫ তারিখের আগেই প্রস্তুতিকাজ শেষ হবে ইনশাআল্লাহ।উল্লেখ্য, তাবলিগ অনুসারির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ময়দানে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বিগত ২০১১ সাল থেকে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা তিনদিন করে দুই পুর্বে অনুষ্ঠিত হয়ে আসাছিল। গত বছর থেকে বাংলাদেশের মাওলানা জোবায়ের ও দিল্লির মাওলানা সা’দ গ্রুপের মধ্যে সমস্যা দেখা দেয়ায় এবার তিনদিনের পরিবর্তে বিরতিহীনভাবে দুইদিন করে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রতি বছরের মতো এবারও আগত মুসল্লরিা জলোওয়ারী খত্তিায় অবস্থান করবে।