জাবিতে অবরোধ তৃতীয় দিনেও অব্যাহত রয়েছে
জাবি প্রতিনিধি, সাগর কর্মকার: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ তিন দফা দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে চলা প্রশাসনিক ভবন অবরোধ আজ তৃতীয় দিনেও অব্যাহত রয়েছে। অবরোধের তৃতীয় দিনে প্রথম বারের মত উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম আন্দোলনকারীদের সাথে ঘন্টাব্যাপী কথাবার্তা বললেও আসেনি কোন সমাধান।
আজ (বৃহস্পতিবার) অবরোধ চলাকালে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম আন্দোলনকারীদের সাথে কথা বলার জন্য প্রথমবারের মত পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে উপস্থিত হন। এ সময় উপ-উপাচার্যদ্বয় সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তারা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী কথা বলেন। এছাড়া অবরোধ কর্মসূচি থেকে সরে এসে তাদেরকে আলোচনায় বসার জন্য আহ্বান জানান উপাচার্য। তবে সেখানে উপাচার্য কোনো সমাধান দিতে না পারায় অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
অবরোধ চলাকালীন সময়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘আমরা তোমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে চাই। তবে হলের স্থান সম্পূর্ণ পরিবর্তন করা সময় সাপেক্ষ। নির্ধারিত স্থান থেকে একটু এপাশ ওপাশ করা যেতে পারে।’
এছাড়া দুর্নীতির বিচার বিভাগীয় তদন্তের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘প্রকল্পে যদি দুর্নীতি হয়ে থাকে। তাহলে আমি তৃতীয় কোনো পক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছি, সম্পূর্ণ বিষয়ের তদন্ত হোক।’
গত ২ দিনের ন্যায় বৃহস্পতিবারও সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ও পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে অবস্থান নিয়েছিল আন্দোলনকারীরা। এতে কয়েকজন শিক্ষকসহ জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের জাবি শাখার নেতাকর্মীরা অংশ নেন। যার ফলে অবরোধের তৃতীয় দিনেও কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশ করতে না পারায় পুরোপুরি বন্ধ ছিল প্রশাসনিক কার্যক্রম। তবে ক্লাস-পরীক্ষাসহ একাডেমিক কার্যক্রমগুলো যথারীতি চলমান ছিল।
এদিকে গতকাল (বুধবার) অবরোধ চলাকালীন সময়ে প্রথম দফায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নুরুল আলম ও অধ্যাপক আমির হোসেন মাধ্যমে এবং দ্বিতীয় দফায় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক ও ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসানের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আলোচনার প্রস্তাব দিলেও তা ব্যর্থ হয়।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাদের তিনটি দাবির মধ্যে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ঘিরে নির্মিতব্য তিনটি ১০ তলা হলের বিকল্প স্থান নির্বাচন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে সম্মতি জানান। এক্ষেত্রে প্রকল্প সম্পর্কিত আলোচনা উপাচার্য, দুইজন উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও রেজিস্ট্রারের উপস্থিতিতে করবেন বলে নির্ধারণ করে দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
তবে প্রকল্পে দুর্নীতির বিচার বিভাগীয় তদন্তের বিষয়ে বর্তমান উপাচার্যকে নির্বাহী প্রধান রেখে কোনো আলোচনা করতে রাজি নন তারা।
এ বিষয়ে আন্দোলনকারী ও জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আশিকুর রহমান বলেন, ‘দুর্নীতির অভিযোগের বিষয় ছাড়া আমরা উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি, তবে সেটা হতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আন্তরিকতায়। তবে আলোচনার পরে আমাদের দাবি পূরণ হয়েছে কিনা কিংবা প্রশাসন তাদের কাজগুলো সংশোধন করছে কিনা তার ভিত্তিতে আমরা আন্দোলনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। আর দুর্নীতির অভিযোগে যেহেতু উপাচার্য নিজেই অভিযুক্ত তাই তাকে নির্বাহী প্রধান করে আমরা কোনো আলোচনায় বসতে পারি না। রাষ্ট্রপক্ষের কোনো প্রতিনিধি আলোচনায় নির্বাহী প্রধান হলে আমরা আলোচনায় বসব। সেটা হতে পারে আচার্যের কোনো প্রতিনিধি, ইউজিসি (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন) এর সদস্য অথবা মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তি।’
তবে প্রশাসনের সাথে পুনরায় কখন তারা আলোচনায় বসবে সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি আন্দোলনকারীরা।
প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়নের জন্য গত বছরের ২৩ অক্টোবর ১৪৪৫ কোটি টাকা অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক)। এই প্রকল্পের প্রথম ধাপে ছয়টি আবাসিক হল নির্মাণের জন্য গত ১ মে টেন্ডার আহ্বান করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। হলগুলো নির্মাণে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা।
সম্প্রতি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, নির্মাণকাজ বাধাহীনভাবে সম্পন্ন করতে গত ৯ আগস্ট উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম ও তার পরিবারের নেতৃত্বে শাখা ছাত্রলীগ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে দুই কোটি টাকা বাটোয়ারা করে দেয়। এর আগে গত ২৩ মে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টেন্ডার শিডিউল ছিনতাইয়ের অভিযোগ ওঠে শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।
আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রকল্প বাস্তবায়নে যে মাস্টারপ্ল্যান অনুসরণ করা হচ্ছে তা অপরিকল্পিত-অস্বচ্ছ। পরবর্তীতে মাস্টারপ্ল্যান সংশোধনসহ দুর্নীতির বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও অংশীজনদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।