কালীগঞ্জের রেজাউল দান করে গেলেন চাকুরীর পেনশনের সমস্ত টাকা
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহঃ
নিজে ছাত্রজীবনে কৃষক পরিবার হতে অনেক অভাবের মধ্যদিয়ে লেখাপড়া শিখে চিকিৎসক হয়েছিলেন ডাক্তার রেজাউল ইসলাম রেজা। তিনি ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের চাপরাইল গ্রামের মৃত. আবুল কাশেম মালিতার পুত্র। এলাকার অধিকাংশ মানুষ কৃষক শ্রেনীর ও অসচেতন। প্রায় ২০ বছর আগে শিক্ষার বিষয়ে তারা খুব বেশি আগ্রহী ছিল না। তার দৃষ্টিতে লেখাপড়ার প্রতি অনীহার বিষয়টি নিজেদেরকে ধবংসের সামিল ছিল। এটা থেকে সমাজকে বাঁচাতে তিনি গাঁটের টাকা দিয়ে এলাকার কয়েকটি গ্রামে পাঠাগার নির্মান করে নাম দিয়েছিলেন বাঁচার জন্য সংগ্রাম। যে পাঠাগার গুলোর কর্মকান্ড এখনও চলমান রয়েছে। এখানে সুন্দর পরিবেশে বসে শিক্ষার্থীসহ এলাকার সব বয়সী মানুষ আজ জ্ঞান অর্জন করছেন। শিক্ষার্থীরাও সময় পেলেই এ লাইব্রেরীতে বসে জ্ঞান চর্চা করে থাকে। শুধু তাই নয়, তিনি নিজে ছিলেন একজন ক্যানসারের রোগী। তারপরও এলাকার কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি খবর পেলেই তিনি তার চিকিৎসার জন্য সাহায্য করতেন। এলাকায় এসে কারও চরম অসহায়ত্বের কথা শুনলে নিজে অসুস্থ শরীর নিয়ে ছুটে যেতেন তার বাড়িতে। আশপাশের ৩ ইউনিয়নের যারা কমপক্ষে স্নাতক পাশ তাদের নিয়ে স্থানীয় চাপরাইল বাজারে গড়ে তুলেছিলেন কল্যাণ নামের একটি কল্যানমুখী সংগঠন। এ সংগঠনটিতে ও তিনি আগে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। যে সংগঠন থেকে প্রতি বছর পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা যাচাই করে তাদেরকে দেয়া হয় শিক্ষা বৃত্তি। তিনি এলাকায় আসলে সাথে নিয়ে আসতেন বিভিন্ন ধরনের ঔষধ। যে কয়দিন বাড়িতে থাকতেন এলাকার গরীব অসহায় মানুষদের বিনামূল্যে ব্যবস্থাপত্র দিতেন। তিনি নিজে আর্থিক ভাবে তেমন একটা স্বচ্ছল না হলেও সারাটা জীবন রোজগারের বেশির ভাগই ব্যয় করেছেন জনকল্যানে। তাই ডাঃ রেজাউল ইসলাম রেজা এলাকার সকলের অত্যন্ত কাছের মানুষ ছিলেন। সব শ্রেনীর মানুষই ছিলেন তার অন্ধভক্ত। নিজে ছিলেন দীর্ঘদিনের অসুস্থ রোগী। কিন্তু জনকল্যানকর কাজে তিনি নিজে শ্রম ও সঙ্গে অর্থ দিয়ে সারাজীবন সাহায্য করেছেন। তার কর্মের জন্য কখনও এলাকার মানুষের নিকট কিছু চাননি। শুধু একটা বিষয় তার চাওয়া ছিল সেটা হলো এলাকার মানুষ যেন তাদের সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার চেষ্টা করেন। এ সকল কর্মকান্ডের জন্যই তিনি হয়ে ওঠেন আমাদের রেজা ভাই। এ মহৎ মানুষটিই মোটর নিউরন ডিজিজ রোগে আক্রান্ত হয়ে রোববার রাত ১১টা ৫০ মিনিটে তার দীর্ঘদিনের কর্মক্ষেত্র ঢাকার আদ্বদীন হাসপাতালের আইসিউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ তিনি নিশ^াস ত্যাগ করেন। মৃতকালে তার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। মঙ্গলবার মরহুমের মরদেহ কালীগঞ্জে আনার পর তার স্বজনসহ এলাকাবাসী কান্নায় ভেঙে পড়েন। মঙ্গলবার বিকালে তার নিজ গ্রাম চাপরাইল স্কুল মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। তার জানাজায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। ডাঃ রেজাউল ইসলাম রেজা সর্বশেষ আজগর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রফেসর ছিলেন। তার সহধর্মিনী জাকিয়া রেজা ঢাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সহকারী অধ্যাপক। বড় ছেলে শোভন রেজা একজন মেডিকেল কর্মকর্তা ও ছোট ছেলে সুমন রেজা প্রকৌশলী। ডাঃ রেজা তার চাকুরী জীবনের পেনশনের টাকা দিয়ে এলাকায় গড়ে তুলেছেন একাধিক জনহিতকর প্রতিষ্ঠান। এলাকারবাসীর মধ্যে প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার ভট্রাচার্য্য বলেন, রেজা ভাই ছিলেন এলাকাবাসীর কাছে পরম শ্রদ্ধার পাত্র। তিনি সকলকে নিজের পরিবারের মানুষ ভাবতেন। এটা বলতে বলতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রাজু আহম্মেদ রনি লস্কর বলেন, ডাঃ রেজাউল ইসলাম ছিলেন এলাকার মানুষের আত্বার আত্বীয়। সততার এক জ¦লন্ত প্রমান তিনি। অসময়ে পরপারে চলে যাওয়ায় কালীগঞ্জবাসী একজন অভিভাবককে হারালো।