টানা তৃতীয় দিনে সর্বাত্মক ধর্মঘটে অচল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জাবি প্রতিনিধি, সাগর কর্মকার:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের অপসারণ চেয়ে টানা তৃতীয় দিনের মতো ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করছে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
সকালে সাড়ে ৮টা থেকে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলনকারীরা নতুন ও পুরাতন প্রশাসনিক ভবন এবং বিভিন্ন অ্যাকাডেমিক ভবনের প্রবেশ ফটক আটকে অবস্থান নেন। অবরোধের কারণে উপাচার্য ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পারেননি। অধিকাংশ বিভাগে পূর্ব নির্ধারিত ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুরাতন কলা ভবনের সামনে সহকারী প্রক্টর মহিবুর রৌফ শৈবাল দ্বারা আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থীর উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে ১১টার দিকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আন্দোলনকারীরা। অপরদিকে কর্তব্যরত অবস্থায় আন্দোলনকারীদের দ্বারা এ সহকারী প্রক্টর আহত হয়েছে বলে দাবি করে প্রতিবাদ জানিয়েছে উপাচার্যপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’।
হামলার শিকার নজির আমিন চৌধুরী জয় জানান: বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক মহিবুর রৌফ শৈবালের ‘নেতৃত্বে’ আমার উপর হামলা হয়েছে। এতে আমি অসুস্থ হয়ে গেলে মেডিক্যাল সেন্টারে গিয়ে প্রথমিক চিকিৎসা নিয়েছি।
হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী প্রক্টর মহিবুর রৌফ শৈবাল অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো নিজে আহত হওয়ার দাবি করেছেন। তিনি জানান: আমি তাদের ওপর কোনো হামলা করিনি। ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি জয়কে গেট থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করি। এ সময় নীচ থেকে কেউ একজন আমার তলপেটে লাথি মারলে অসুস্থ হয়ে পড়ি। বর্তমানে আমি সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি।
এ ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, অবরোধের সময় পুরাতন কলা ভবনের সামনে সহকারী প্রক্টর মহিবুর রৌফ শৈবাল শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভবনের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এ সময় অবরোধের অংশ হিসেবে আন্দোনকারীদরে মধ্য থেকে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নজির আমিন চৌধুরী জয় তাদের বাধা দেন। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সহকারী প্রক্টর শৈবালকে বল প্রয়োগ করে সরিয়ে দিলে জয় মাটিতে পড়ে যায়।
এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস বলেন: মহিবুর রউফ শৈবাল যে কাজটি করেছে তা পুরোপুরি অশিক্ষকসুলভ আচরণ। ধর্মঘট করা যেমন একজন আন্দোলনকারীর অধিকার তেমনি করে একজন শিক্ষক ও ক্লাস পরীক্ষা নিতেই পারে। তবে কেউ তার পথ অবরোধ করলে তাকে তিনি টানা হেঁচড়া করতে পারেন না। আমরা জানতে পেরেছি যে, মহিবুর রউফকে পেটে লাথি দেওয়া হয়েছে, তবে ভিডিওতে দেখেছি যে তিনি কোনো প্রকার প্রহার বা লাঞ্চনার শিকার হননি।
বিশ্বাবিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম অনিক বলেন: আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মঘট পালন করছিলাম। এ সময় আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্লাস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছিলাম। তখন সহকারী প্রক্টর এসে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতিকে লাঞ্চিত করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন: এ ধরনের কোনো ঘটনা ভিডিওতে আমি দেখিনি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে বাক-বিতণ্ডার এক পর্যায়ে জয় মাটিতে পড়ে যায়। শৈবাল স্যার তাকে হাত ধরে টেনে তুলেছেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে সকাল সাড়ে ১১টায় আন্দলনকারীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিভিন্ন অনুষদ ভবন প্রদক্ষিণ করে। বিক্ষোভকারীরা সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে ক্লাস চলাকালীন সময়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করলে শিক্ষার্থীদের সাথে তাদের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে ‘উপাচার্য অপসারণ মঞ্চ’ এর সামনে গিয়ে শেষ হয়।