জাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, হল ছাড়ার নির্দেশ
জাবি প্রতিনিধি: সাগর কর্মকার :
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে তার বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়া আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) হামলা চালিয়েছে শাখা ছাত্রলীগ।
হামলা চলাকালে উপাচার্যের বাসভবনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশকে নীরব ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। এছাড়া উপাচার্যপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ‘ধর ধর’, ‘জবাই কর’ স্লোগান দিয়ে হামলায় উস্কানি দিতে দেখা যায়।
হামলায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের তাৎক্ষণিক ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে এবং অন্তত ২০ জনকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে বলে জানান জাবি চিকিৎসা কেন্দ্রের চিকিৎসক ডা. রেজওয়ানুর রহমান।
বেলা পৌনে ১২টার দিকে ক্যাম্পাস শিবির মুক্ত করতে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানার নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সেখানে যায় ছাত্রলীগ। একপর্যায়ে আন্দোলনে শিবির আছে আখ্যা দিয়ে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। অবস্থা এমন দাড়ায় যে হিন্দু ধর্মাম্বলী এক আন্দোলনকারীকেও শিবির বলে মারধর করে।
ছাত্রলীগের মারধরের বিষয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষক পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক খবির উদ্দিন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এরকম ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনা ইতিপূর্বে দেখা যায়নি। উপাচার্যপন্থী শিক্ষকদের উপস্থিতি ও প্রত্যক্ষ উস্কানিতে ছাত্রলীগ আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। ছাত্রলীগ যখন আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে তখন ভিসিপন্থী শিক্ষকরা তাদেরকে স্বাগত জানিয়ে হাততালি দিয়েছে।
আর হামলার বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা বলেন, “আমরা শিবিরমুক্ত ক্যাম্পাস চাই। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে শিবির সংশ্লিষ্টতার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল।”
তবে আন্দোলনে শিবির সম্পৃক্ততার ছাত্রলীগের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আন্দোলকারীদের মুখপাত্র দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন। তিনি বলেন, “আন্দোলনে কোন শিবির সংশ্লিষ্টতা নেই। যেকোন শক্তিকে প্রতিহত করার জন্য শিবির অপবাদ দেয়াটা পুরোনো অপকৌশল।
হামলার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ.স.ম. ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, চেষ্টা করেও আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। বড় ঘটনা এড়াতে আমরা তৎপর আছি।
এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক জরুরী সিন্ডিকেট সভা ডেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য হল বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। বিকেল সাড়ে চারটার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়। আজ দুপুর আড়াইটার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনে অনুষ্ঠিত জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ও সিন্ডিকেট সচিব রহিমা কানিজ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ