মানুষ বিজ্ঞানের কল্যাণে প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালিয়ে অনেক ক্ষেত্রে সফল হয়েছে। প্রকৃতির কাছ থেকে অকৃপণভাবে সব পেয়ে এসেছে। উন্মুক্ত উদার নীলাকাশ, তাজা বাতাস ও স্বচ্ছ সুপেয় পানির ভা-ার। তাতে এখন টান ধরছে বলে বুঝতে শিখছি; এবং এ অবস্থার পরিত্রাণও চাই। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, তার থেকে বেশি পরিমাণ পানির চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিদিন নতুন হারে। শিল্প, কৃষি, সেচ, পানি বিদ্যুত, নগরায়নের প্রসার ঘটছে। বাংলাদেশসহ অনেক দেশেই একবার ব্যবহৃত পানি পুনরায় ব্যবহারের জন্য পরিষ্কার করার উপায় বা পদ্ধতি মানুষ এখনও গ্রহণ করতে পারেনি। ফলে জমানো পানিতে টান ধরেছে। চোখ বন্ধ করে বলা যায় ভবিষ্যতে পৃথিবীজুড়ে সুপেয় পানির দারুণ সঙ্কট শুরু হবে।
নিজেদের স্বার্থেই আমাদের হৃদয় ও বুদ্ধি মনোযোগ দিয়ে সুপেয় পানির ভা-ার বৃদ্ধির চেষ্টা করতে হবে। নদী-নালা, লেক ও খাল-বিল খনন বৃদ্ধি করে পানি ধরে রাখতে হবে। দেশে দুই তৃতীয়াংশ পানির জলাধার রাখার দরকার অথচ আজ দেখুন ৮৬ তে যখন কল্যাণপুর থেকে সাভার পানির এক সুন্দর জলাধার ছিল, সেটি ভরাট হতে হতে এখন প্রায় শেষের দিকে। একসময় সরকার আইন করে জলাধার বন্ধ করেছিল। কিন্তু বর্তমানে তা ঢালাওভাবে ভরাট হচ্ছে। এরপর এই শহর স্থাপনকারীরা সুপেয় পানির অভাবে এসব ফ্ল্যাট ও সুন্দর ভবন কিভাবে ব্যবহার করবেন?
গ্রামের ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুরগুলো সংস্কার প্রয়োজন। সমস্যা হলেও বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য কাবিখা প্রকল্প নিয়ে পুকুর কাটা প্রয়োজন। মালিকের ইচ্ছা ও আর্থিক মতামত দুটো জরুরী বিষয়। তাই গ্রামের প্রচলিত প্রথায় গর্ত খুঁড়ে ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করে বৃষ্টির ছুট পানি ধরে রাখার জরুরী উদ্যোগ প্রয়োজন। এ কাজটি জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণ (ঘধঃরড়হধষ জঁৎধষ ঊসঢ়ষড়ুসবহঃ এঁধৎধহঃবব) প্রকল্প বা সহজ কথায় ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের মাধ্যমে করা যায়। যা নি¤œলিখিতভাবে করা যায়।
কৃষি জমির প্লটের এককোণে ১০ ফুট ব্যাসের ৬ ফুট গভীর (গর্ত) খনন। আগামী বর্ষায় এ গর্তগুলো বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হবে। একজন অদক্ষ পুরুষ-নারী শ্রমিক দৈনিক মজুরিতে যে টাকা পাবেন, তা ওয়ার্ড/ কমিশনার দেবেন। গর্ত খননের ফলে যে মাটি উঠবে, তা জমির উন্নয়নে বা আল প্রস্থকরণে ব্যবহার করা যাবে। এর ফলে ১. বর্ষার মৌসুমে একাজের মাধ্যমে কিছু শ্রমিকের অর্থ আয়ের পথ উন্মুক্ত থাকবে। হয়ত গর্তে ধরে রাখা পানি বর্ষার পরে কিছু দিন ব্যবহার করা যাবে। পানির সাশ্রয় হবে। পাম্পের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের পানির স্তরকে নিচে নামিয়ে দিচ্ছে। ২. প্রতি ফসলি জমিতে বৃষ্টির পানি জমে ফসল নষ্ট হওয়ার বা বন্যার আশঙ্কা কমবে। ৩. এর ফলে নলকূপের ওপর চাপ কমবে। এ বিপুল জমা পানি মাটির নিচের পানির স্তরকে তুলতে সাহায্য করবে। ৪. বর্ষার শেষে পানি গর্তে শুকিয়ে যাওয়ার ওখানে পচাপাতা, গোবর ফেলে জৈব সার তৈরি করে জমিতে ব্যবহার করতে সক্ষম হবে। ৫. স্থানীয় প্রশাসন গর্ত খননকারীকে বিনামূল্যে চারা রোপণ ও মজুরি দিতে পারেন। ৬. গর্তে চ্যাং, শোল, তেলাপিয়া মাছও চাষ করা যায়।