মৃণাল চৌধুরী সৈকত, টঙ্গী : গাজীপুর মহানগর তথা টঙ্গীতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে-ই চলছে হচ্ছে সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। করোনা মহামারীর কারণে উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে শুধুমাত্র শাস্ত্রমতে এবারের পূজা অনুষ্ঠান স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর নজরাধির মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে।
গত বুধবার পঞ্চমী (দূর্গা বোধন বা মঙ্গল ঘট স্থাপন) ও গতকাল বৃহস্পতিবার মহাষষ্টি (অধিবাস) পূজার মধ্যদিয়ে শুরু হয়ে আজ মহাসপ্তমী ও আগামীকাল শনিবার মহাঅষ্টমী এবং রোববার মহানবমী পূজা বিহিত করে আগামী ২৬ অক্টোবর সোমবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে শারদীয়া দূর্গা পূজা। এবছর মা দূর্গার ভক্তরা বিশ^ব্যাপী সকল মানুষকে করোনামুক্ত রাখার জন্য বিশেষ প্রার্থনা করবেন।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ এবং সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি পরিপূর্ণভাবে মেনে ধর্মীয় শাস্ত্রমতে দুর্গা পূজার আয়োজন ও অংশগ্রহণের জন্য গাজীপুর মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ এবং টঙ্গী থানা পূজা উদযাপন পরিষদ সনাতন সম্প্রদায়ের সকল ভক্ত ও পূজারীবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
সূত্রমতে, এ বছরের পুজা অন্যান্য বছরের মতো নয়। বিশ^ ব্যাপী কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস আতঙ্কের মধ্যেই দোলায় চড়ে দেবীপক্ষের সূচনা হয়েছে। মহামারী-দুর্যোগ মাথায় নিয়েই অনেকটাই সর্তকতার সহিত ও সংক্ষিপ্ত আকারে চলছে মা দূর্গার পূজা। ফলে বিগত বছরের দুর্গোৎসবকে এবার শুধু মাত্র ‘দুর্গাপূজা’ হিসেবে অভিহিত করেছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ।
এবার মহালয়া ছিল ১৭ সেপ্টেম্বর। মহালয়ার ১৫ দিন পর সাধারণত দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হলেও পঞ্জিকার হিসাব অনুযায়ী এবার আশ্বিন মাস ‘মল মাস’ অর্থাৎ অশুভ মাস হওয়ার কারণে কার্তিক মাসে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
শাস্ত্রমতে মতে, এবার মাতৃরুপীনি দুর্গার আগমন হচ্ছে দোলায় চড়ে। দোলায় চড়ে স্বামীর ঘর থেকে-পিত্রালয়ে আসেন তিনি। দোলায় আগমন এর অর্থ মড়ক। ফলে, পুজা শুরু থেকে মহামারীর পরিস্থিতি বজায় থাকার আশংকা রয়েছে। আর মা দূর্গার গমন এবার গজে। অর্থাৎ হাতিতে চড়ে মা পিত্রালয় ছেড়ে পাড়ি দেবেন স্বর্গে। গজে চড়ে গমনের ফল শুভ হয়। রবি, শষ্যের ফলন ভালো এবং মানুষের কল্যাণ বয়ে আনে বলে শাস্ত্রমত রয়েছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও প্রশাসনিক তথ্যমতে, এ বছর সারা দেশে মোট ৩০ হাজার ২৩১টি পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর পূজা হয়েছিল ৩১ হাজার ৩৯১টি। এবার ১ হাজার ১৮৫টি পূজা কম হচ্ছে। মহামারী করোনা পরিস্থিতির কারণে পূজার সংখ্যা কমেছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
এছাড়াও ঢাকা বিভাগে এবছর ৭ হাজার ১৪টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর অনুষ্ঠিত হয়েছিল ৭ হাজার ২শ ৭১টি পূজা। গত বছরের তুলনায় চট্রগ্রামম বিভাগে ৩ হাজার ৯০৬টি, কমেছে ৫শ ৫০ টি পূজা খুলনা বিভাগে ৪ হাজার ৬শ ৮৯টি, সিলেট বিভাগে ২ হাজার ৬শ ৪৬টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ১ হাজার ৫শ ৮৪টি, বরিশাল বিভাগে ১ হাজার ৭০১ টি, রংপুর বিভাগে ৫ হাজার ২৫০টি এবং রাজশাহী বিভাগে ৩ হাজার ৪শ ৩৫ টি দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এদিকে গাজীপুর মহানগরের ৮টি থানায় এলাকায় মোট ৮৭টি পূজা হচ্ছে। তার মধ্যে টঙ্গী পূর্ব থানায় ৬টি, পশ্চিম থানায় ২টি, পূবাইল থানায় ৯টি, গাছা থানায় ১৩টি, বাসন থানায় ৯টি, সদর থানায় ৩০টি, কাশিমপুর থানায় ১৩টি, কোনাবাড়ি থানায় ৫টি পূজা শান্তিপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
টঙ্গী পূর্ব থানা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রঞ্জিত কুমার দাস জানান, প্রতিবারের চেয়ে এবছর মহামারী করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক পূজা উদ্যাপন করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে স্থানীয় আইনশৃংখলা বাহিনী যে ভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোড়দার করেছেন তাতে আমরা সন্তুষ্ট। সকল শ্রেনী পেশার ধর্মপ্রাণ পূজারী ও ভক্তবৃন্দকে শারদীয়া শুভেচ্ছাসহ স্থাস্থ্যবিধি মোতাবেক পূজায় অংশ নিতে আহবান জানান তিনি।
গাজীপুর মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অরুন কুমার সাহা বলেন, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনেই আমরা পূজার কার্য পরিচালনা করছি। আইনশৃংখলাবাহিনী আমাদেও সার্বক্ষনিক সহযোগীতা করছেন আর আমরাও নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মীদের মাধ্যমে পূজা মনিটরিয়ের ব্যবস্থা করছি।
গাজীপুর মহানগর মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিটি থানা এলাকায় অঞ্জলি দানের সময় ফেসবুক লাইভের সহযোগিতা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেসব জায়গায় সরাসরি অঞ্জলি হবে, সেখানে ২৫ থেকে ৫০ জনের বেশি ভক্ত ও পূজারী সমবেত হতে পারবেন না। যারা আসবেন তারা দূরত্ব বজায় রাখবেন। সন্ধ্যা আরতি শেষে রাত ৯টার মধ্যে অবশ্যই পূজা মন্ডপ বন্ধের নির্দেশনা রয়েছে। জন-সমাগমের কারণে স্বাস্থ্যবিধি যাতে ভঙ্গ না হয় সেদিকে খেয়াল রেখেই দুর্গা পূজায় আগেই প্রসাদ বিতরণ করবেন এবং বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও, ভক্তিমূলক সংগীত ছাড়া অন্য কোনো গান বাজানো যাবে না, মাইক ব্যবহার করা যাবে না এবং প্রতিটি পূজা মন্দিরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজায় অংশ নিতে পূজারী ও ভক্তদ্বয়ের প্রতি আহবান জানান গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ।
এছাড়াও প্রতিটি থানা এলাকায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।