গাজীপুরের কেশুরিতা গ্রামের বটলায় চিত্র প্রদর্শনী
শহরের চাকচিক্যময় কোন গ্যালারি নয়; নাড়ির টানে গ্রামের সবুজ প্রকৃতির মাঝে চিত্র প্রদর্শনী করে বেড়াচ্ছেন ভাস্কর্য শিল্পী কুয়াশা বিন্দু। তিনি গাজীপুরের বাড়ীয়া গ্রামের সন্তান। চারুকলার মৃৎশিল্প বিভাগের শিক্ষার্থী কুয়াশা বিন্দু অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। দগ্ধ কাঠে তৈরি বিভিন্ন পোট্রেট তাঁর বিশেষ শিল্পকর্ম। শুক্রবার দিনব্যাপী কুয়াশা বিন্দুর চিত্রকর্ম প্রদশর্নীর আয়োজন ছিল গাজীপুরের কেশুরিতা বাজার বটতলায়। জেলা শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে বেলাই বিলের পাড়ে কেশুরিতা বাজারে তেমন লোক সমাগম নেই। গ্রামের লোকজন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাজারে যায় না। বরং সবুজ প্রকৃতির সৌন্দর্য পান করতে অনেকেই শহর থেকে কেশুরিতায় ঢু মারেন। বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, বাজার বটতলায় আর চারপাশে সাজানো কুয়াশার চিত্রকর্মগুলো শোভা পাচ্ছে। গ্রামের লোক, কিছু সাংস্কৃতিক কর্মী, শিল্প প্রেমিক আর কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী সেখানে হাজির হয়েছেন। নগ্নদেহী এক কৃষক সফর উদ্দিন বেলাই বিলে বিস্তীর্ণ ধান ক্ষেতের সবুজ দিগন্ত ভেদ করে এসে যোগ দিলেন সাদামাটা এ আয়োজনে। ঘি রঙের মোটা মার্কিন কাপড়ের ফিতা কেটে চিত্র প্রদর্শনীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন তিনি। তাঁকে ঘিরে এ সময় অনুষ্ঠান আলোকিত করে করতালি দিয়ে উৎসাহ যোগালেন, ‘কড়ানজর’ পত্রিকার সম্পাদক মাসুদুল হক, গাজীপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রাহিম সরকার, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী সৈয়দ মোকছেদুল আলম (লিটন), চিত্র শিল্পী জাহিদ হোসেন সোহেল, আবৃত্তি ও নৃত্য শিল্পী উদয় সিদ্দিকী, সংবাদকর্মী মাজেদ, সাইফুলসহ শিল্পী কুয়াশা বিন্দু ও তাঁর স্ত্রী-কন্যা। এরপর কয়েকটি গান গাইলেন বাউল লোকমান ফকির। ‘চোর’ ও ‘আই লাভ ইউ সৌরভ’ শিরোনামে দুটি নাটকের মুখাভিনয় করলেন মুক্তমঞ্চ নির্বাক দলের সৌরভ চন্দ্র পাল ও আল আমিন। কুয়াশা বিন্দু জানান, এই চিত্র প্রদর্শনীতে তাঁর ৩০ টি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে ৫টি দগ্ধ কাঠের তৈরি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পোট্্েরট এবং ২৫টি অ্যাক্রেলিক পেন্টিং। এর আগেও মাটির টান আর ঘ্রাণে গত ১৯ মার্চ একইভাবে কানাইয়া গ্রামে চিত্র প্রদর্শনী করেছেন। উদ্দেশ্য হলো-গ্রামের প্রকৃতির চিত্র, গ্রামের মানুষই দেখবেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবার, বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদসহ জাতীয় চারনেতার পোট্রেট করেছেন দগ্ধ কাঠের ছোট ছোট চিপ (টুকরা) বসিয়ে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের অফিস কক্ষের ফটকের মুখেই দেখা যায়, কুয়াশা বিন্দুর করা বঙ্গবন্ধুর দগ্ধ কাঠের একটি বিশাল পোট্্েরট ঝুলছে। গাজীপুরে ভাওয়াল রাজবাড়ীর মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করলেই কুয়াশা বিন্দুর শিল্পকর্ম দৃষ্টি কাড়ে। সম্প্রতি মহানগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংস্কার কাজে যুক্ত হয়েছে তাঁর গ্লাস ফাইবারে তৈরি রিলিফ ভাস্কর্য। এতে তিন ভাগে বিভক্ত দেয়ালে ঠাঁই পেয়েছে বাহান্ন’র ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয় এবং গাজীপুরের এ যাবৎকালের বিশিষ্ট রাজনীতিক,-কবি-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী-অভিনয় শিল্পীদের নিয়ে তৈরি ভাস্কর্য।