ঝিনাইদহে পাচার হওয়ার ৩৫ বছর পর পাকিস্থান থেকে ফিরলো জাহেদা!
ঝিনাইদহ-
বাংলাদেশ থেকে ৩৫ বছর আগে পাঁচার হওয়া মেয়ে ফিরলো পাকিস্তান থেকে ফিরল বাংলাদেশে। আনন্দে আবেগে আপ্লুত পুরো গ্রামবাসী। ১৯৮৫ সালের দিকে জাহেদা খাতুনকে বিয়ে দেওয়া হয় পাবনা ঈশ্বরদীতে। বিয়ের কয়েকবছর পর তাকে নেশা জাতীয় ওষুধ খায়িয়ে বিক্রি করে দেয় তার শ্বশুর বাড়ীর লোকজন। কিন্তু জাহেদার পরিবারকে বলা হয় তিনি বাড়ীর উদ্দেশ্যে চলে গেছেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাকে না পেয়ে পরিবার ভেবেছিল তিনি মারা গেছেন। কিন্তু বহু চরাই উৎরাই পার করে সেই জাহেদা প্রায় ৩৫ বছর পর ফিরে এসেছে পাকিস্তান থেকে নিজ গ্রামে তার মায়ের কাছে। জাহেদা খাতুন, বর্তমান বয়স প্রায় ৫৫ বছর। বাড়ী ঝিনাইদহের ভুটিয়ারগাতী গ্রামে। মৃত জব্বার আলী শেখের বড় মেয়ে তিনি। আজ থেকে ৪০ বছর আগে বিয়ে হয় পাবনা জেলার ঈশ্বরদীর রহিমের সাথে। বিয়ের আগে তার পরিবার জানতো না স্বামীর ঘরে সতিন আছে। শ্বশুর শাশুড়ি ও ননদ ষড়যন্ত্র করে জাহেদাকে নেশা জাতীয় কিছু খাইয়ে অজ্ঞান করে বিক্রি করে দেয়। পরে তার যখন জ্ঞান ফিরলো তিনি দেখলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন এক জায়গা। পরবর্তীতে তিনি বুঝতে পারেন এটা বাংলাদেশ নয়, এটা পাকিস্থানের করাচি শহর। সেখানেও তাকে বিক্রি করা হয়। তাও আবার দুই বার। একপর্যায়ে এক আলেম তাকে পেয়ে কিনে মুক্ত করে দেন। বাংলাদেশে ফিরে আসার কোন ব্যবস্থা করতে না পেরে তিনি জাহেদাকে এক পাকিস্তানি যুবক গুল্লা খানের সাথে বিয়ে দিয়ে দেন। জাহেদার জীবনে একটু স্বস্তি ফিরে এল। সেখানে তার ইয়াসমিন (২২) নামে এক মেয়ে রয়েছে। কিন্তু অন্তরে তার নিজ দেশ, মা, বাবা, ভাই ও বোনের প্রতিচ্ছবি ভাসছিল। এরপর পাকিস্থানে ডধষরঁষষধয গধৎড়ড়ভ (ফেসবুক এ্যাকাউন্ট) নামের এক ছেলের সাথে তার পরিচয় হয়। তিনি ২০১৮ সাল থেকে ফেসবুকে নিয়মিত পোষ্ট দিতে থাকেন। সেই পোষ্ট চোখে পড়ে নেত্রকোনা জেলার ছেলে মনজুর আহমেদের। এরপর তাদের যোগাযোগ হতে হতে পরিবারের সাথে কথা হয় জাহেদার। জাহেদা বাড়ী ফিরতে চান। কিন্তু টাকা ও পাসপোর্টের অভাবে তিনি ফিরতে পারছেন না। পরে ডধষরঁষষধয গধৎড়ড়ভ ই সব ব্যবস্থা করে তাকে দেশে পাঠান। জাহেদার বাংলাদেশী সন্ধানকারী নেত্রকোনার মনজুর আহম্মেদ বলেন, আমি পাকিস্থানের একটি ফেসবুকের ওলিউল্লাহ মারুফ নামের আইডিতে বাংলাদেশের একটি মেয়ের ছবি দেখতে পাই। ঐ আইডির পোষ্টে উর্দূতে লেখা আমি বুঝতে না পারায় বাংলায় অনুবাদ করে বুঝতে পারলাম যে বাংলাদেশের একটি মেয়ে বহু বছর আগে পাঁচার হয়ে পাকিস্থানে আছে। সে তার মা, ভাই বোনের জন্য প্রতিনিয়ত কান্নাকাটি করে। এরপর ঐ আইডিতে ফোন করে জাহেদার সাথে কথা বলে জানতে পারি তার বাড়ি ঝিনাইদহের ভূটিয়ারগাতি গ্রামে। এরপর আমি নিজে ভূটিয়াগাতি গ্রামে গিয়ে জাহেদার পরিবারের লোকদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিই। জাহেদা ফিরে আসায় আমি অত্যন্ত অনন্দিত। গত ২৮শে আগস্ট রাতে তিনি বাংলাদেশে বিমান যোগে নামেন। পরেরদিন ২৯শে আগস্ট বিকালে তিনি ঝিনাইদহের নিজ বাড়িতে ফেরেনে। জাহেদা মাত্র ৩ মাসের ভিসায় পরিবারের কাছে ফিরেছে। সময় শেষ হলেই তাকে পাকিস্তানে ফিরতে হবে।