স্টার্ফ রিপোর্টার:আগামী ৯ জুন ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট জাতীয় সংসদে পেশ করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বুধবার (২০ এপ্রিল) অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ভার্চুয়াল সভা শেষে অর্থমন্ত্রী এ কথা জানান।
তিনি বলেন, আগামী বাজেট হবে সাধারণ মানুষের বাজেট। বাজেটে দেশের অর্থনীতিকে চাঙা রাখতে যা যা প্রয়োজন সেসব উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় আমদানিতে নিরুৎসাহিত করা হবে কিনা। এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের রপ্তানির পাশাপাশি আমদানিও বাড়ছে। এটা বন্ধ করা যাবে না। তবে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণের কোন ইচ্ছে সরকারের নেই। মেশিনারিজ, শিল্পে ব্যবহার্য কাঁচামাল, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এগুলোর আমদানি অব্যাহত থাকবে। তবে অপ্রয়োজনীয় এবং বিলাশবহুল পণ্য আমদানির ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হতে পারে।
তিনি বলেন, বাজেট প্রণয়নের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এখনো কোন কিছু চূড়ান্ত হয়নি। রাজস্ব আদায় এবং বাজেট বাস্তবায়নে সম্পদ আহরন কিভাবে হবে সে নিয়ে অর্থ বিভাগ, এনবিআরসহ সরকারি সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে ইতোমধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আরও সভা হবে সেখানে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক অর্থনীতির সমসাময়িক অবস্থা বিবেচনা নিয়ে সরকার আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট সংকোচনমূলক বাজেট প্রণয়নে কাজ করছে। বিশ্ববাণিজ্যে মন্দাভাব দেখা দেওয়ায় সরকার ব্যয় কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। এ অবস্থায় চলতি অর্থবছরের চেয়ে জিডিপির ২ শতাংশ কমিয়ে বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হবে। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল জিডিপির ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটের আকার হতে পারে জিডিপির ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে জিডিপির অংশ হিসেবে বাজেটের আকার ২ শতাংশ কমিয়ে আনা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটের আকার নির্ধারিত রয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। বাজেটের আকার কমলেও আগামী অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি হতে পারে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকার মত। বাজেট ঘাটতি হচ্ছে জিডিপির সাড়ে ৫ শতাংশ।
সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের জন্য মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪৪ লাখ ১২ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৫ শতাংশ।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ’ কমিটির সভায় আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকারটি তুলে ধরেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার। জুম প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত এই সভায় পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, এনবিআর চেয়ারম্যান, বাণিজ্য সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, সম্পদ কমিটি সভায় আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের একটি সম্ভাব্য চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, মোট রাজস্ব আদায় করতে হবে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। যা জিডিপির ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য রয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ১১ দশমিক ৩ শতাংশ। জিডিপির অংশ হিসেবে চলতি অর্থবছরের চেয়ে এবার রাজস্ব আদায়ের হার কমানো হয়েছে প্রায় ২ শতাংশ। জিডিপির তুলনায় কমলেও চলতি অর্থবছরের চেয়ে তা ১১ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
নতুন বাজেটে ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৫.৫৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ঘাটতি জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে। সে হিসাবে ঘাটতি কমছে। কিন্তু জিডিপির তুলনায় ঘাটতি কমলেও টাকার অঙ্কে ঘাটতি বাড়ছে ৩০ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।