আবদুল্লাহ আল কেমী :
দিন কয়েক পরই বাংলা নববর্ষের আগমন। চৈত্রের বিদায়ে বৈশাখের নবযাত্রা। আর পহেলা বৈশাখ মানে ঐতিহ্যের আবাহন। বাঙালিয়ানা ধরে রেখে চিরচেনা আনন্দে নববর্ষ বরণ। প্রাণের সুরে আরও একবার মেতে ওঠা বাঙালি উৎসবে। উৎসবের পোশাক হওয়া চাই জুতসই। সাজসজ্জায় থাকতে হবে পরিপাটি।
বৈশাখের রকমারি পোশাক নিয়ে ফ্যাশন হাউস আলমিরার স্বত্বাধিকারী শাহরুখ আমিন বলেন, ‘বৈশাখ আমাদের ঐতিহ্যের উৎসব। এখানে বাইরের মোটিফ ব্যবহারের সুযোগ নেই। তবে গতানুগতিক ঢাকঢোল, পাখা, একতারা থেকে বের হয়ে একটু আলাদাভাবে চিন্তা করা হয়েছে এবার। রঙের ক্ষেত্রে প্রচলিত লাল-সাদার বাইরেও কয়েকটি রঙের মিশ্রণ পাওয়া যাবে।’
শাড়ি :বৈশাখ উদযাপনে ঐতিহ্যবাহী দেশি পোশাকের ব্যবহার অবিচ্ছেদ্য। শত শত বছর ধরে শাড়িতে মিশে রয়েছে বাঙালিয়ানার ছাপ। মাঝবয়সী মালিহা আফরোজ বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ আমাদের জন্য অনেক বড় আনন্দের দিন। এই দিনে শাড়ির জুড়ি নেই। বৈশাখী উৎসবে আমার চাই রঙিন শাড়ি।’ তাঁত শিল্প শুধু দেশের ঐতিহ্যই নয়, তাঁতের কাজে দেখা মেলে শাড়ি বুননের হাজারো দার্শনিক শিল্পীর গল্প। প্রতিবারের মতো রকমারি বুননের ডিজাইন ছাড়াও বৈশাখী বাজারে এবার দেখা যায় তাঁতের শাড়ির ওপর দারুণ দারুণ বল্গক পেইন্টের কাজ। থাকবে এমব্রয়ডারির কাজও। গরমকে প্রাধান্য দিয়েই উৎসবের ভাব আনা হয়েছে ডিজাইনগুলোতে। বৈশাখের রঙ সাদা-লালের পাশাপাশি অন্য রঙের মিশ্রণ পাওয়া যাবে বেশ। এমব্রয়ডারিতে সূক্ষ্ম, সহজ, রুচিসম্মত কাজ চোখে পড়ে এবারের বৈশাখ আয়োজনে। জ্যামিতিক নকশার অসামান্য ব্যবহার দেখা যায় শাড়ির ওপর করা রকমারি ডিজাইনে। বৈশাখী ডিজাইনেও ব্যতিক্রম ঘটবে না। বল্গক, হ্যান্ডপেইন্ট, এমব্রয়ডারি, স্ক্রিন প্রিন্ট, স্টিচের মতো সবরকম ডিজাইনেই এবার প্রাধান্য পাবে জ্যামিতিক নকশা। ছোট আঁচলের শাড়ি ভিন্ন স্টাইলিশ লুক আনে। তবে সব শাড়ির জন্য ছোট আঁচল মানানসই নয়। এ ক্ষেত্রে জামদানি, হাফ সিল্ক খাপে খাপ। আর ফেস্টিভ ফিউশনের জন্য কাতান, সিল্ক ও হাফ সিল্ক।
সালোয়ার-কামিজ :দিনবদলের সঙ্গে সঙ্গে সালোয়ার-কামিজ মেয়েদের অতি আরামের পোশাকে রূপ নিয়েছে। গরমেও নেই তার জুড়ি। এমনটি মনে করেন তরুণী মিতু সরকারও। তিনি বলেন, ‘আমাদের বয়সী মেয়েরা একটু চঞ্চল থাকতে পছন্দ করে। আমিও ব্যতিক্রম নই। তাই সালোয়ার-কামিজই বেশি আরামদায়ক মনে হয় এ ক্ষেত্রে। আর বৈশাখে অবশ্যই চাই বৈশাখী কামিজ।’ বৈশাখী কামিজে স্লোগান রঙের বাইরেও চিন্তা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রঙের উজ্জ্বলতার কথা মাথায় রেখে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে কমলা, গাঢ় লাল, হলুদের মতো রঙের মিশ্রণ। কামিজে দেখা যায় এখন বিশেষ প্যাটার্ন। এমব্রয়ডারি, বল্গক, স্ক্রিন প্রিন্টের পাশাপাশি কামিজের স্লিভে পরিলক্ষিত হয় আলাদা কিছু ডিজাইন। রয়েছে সেলাইয়ের ভিন্নতাও। ঐতিহ্যবাহী মোটিফের সঙ্গে রয়েছে ফুলেল, জ্যামিতিক নকশা। রঙের ভিন্নতায় দেখা মেলে বাটিক আর টাইডাইয়ের নকশা। সালোয়ারে দেখা যায় চলতি ট্রেন্ডই। ডিভাইডারের বৈশাখ ডিজাইনে রয়েছে একই প্যাটার্নের মধ্যে ভিন্ন প্রিন্ট, টেক্সচার। একই রকম চোখে পড়ে পালাজ্জোতেও। এই বৈশাখ শুধু পালাজ্জো, ডিভাইডারের দখলে এমনটি নয়; সালোয়ারের অন্যতম ডিজাইনগুলো থাকবে লেগিংসেও। সাদা, কমলা, লাল, হলুদের মতো উজ্জ্বল লেগিংসগুলো যেমন এক রঙা পাওয়া যাবে, থাকবে প্রিন্টিংও। গত কয়েক বছরের মতো এবার বৈশাখেও ঘুরেফিরে রয়ে গেল সালোয়ারের এই প্যাটার্নগুলো। বাহারি রঙের পাটিওয়ালা সালোয়ারে একটু উজ্জ্বল রঙের হলেই ভালো উৎসবের জন্য। সালোয়ারের মধ্যে চুড়িদার একধরনের ক্ল্যাসিকাল ডিজাইন হয়ে চলে আসছে বছর বছর ধরে। কিন্তু ট্রেন্ডের দায়ে চুড়িদারেও আসে কিছুটা হলেও পরিবর্তন। সাধারণত কটন বা হালকা কাপড়ের চুড়িদারই বেশি দেখা যায়। গাঢ় লাল, ম্যাজেন্টা, কমলা বা সাদার মতো উজ্জ্বল রঙে পাওয়া যাবে তা বৈশাখী সংগ্রহে।
সাজসজ্জা :বৈশাখ মানেই উৎসব এবং ঘোরাঘুরি। আর এক্ষেত্রে যতটা সম্ভব হালকা সাজসজ্জা রাখতে হবে। তা ছাড়া খুব বেশি মেকআপ নিয়ে বাইরে যাওয়া এখন ফ্যাশনের বাইরেই বলা চলে। সহমত স্নাতক শ্রেণীর ছাত্রী টুম্পা আক্তারের। তিনি বলেন, ‘বাইরে ঘোরাঘুরির জন্য খুব বেশি সাজ আনন্দের বদলে বিরক্তি ডেকে আনে। তা নিজের স্টাইলও নষ্ট করে। তাই কাজল, কানের দুল, ব্রেসলেট যথেষ্ট বলে মনে করি। খুব বেশি হলে হালকা লিপস্টিক এবং কপালে টিপ নেওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে স্যান্ডেল আরামদায়ক হওয়া চাই আমার। বড়জোর বক্স হিল পরি। তবে চুল ছেড়ে অথবা বেঁধেই বের হই, তা হওয়া চাই ট্রেন্ডি লুকের মধ্যে।’ এমন অবস্থায় যতটা সম্ভব কম এক্সেসরিজে সেরে ফেলা ভালো। আবার হালকা সাজের বাইরেই ভাবতে হবে বৈশাখের কোনো অনুষ্ঠানের জন্য। আর সে ক্ষেত্রে নিজের সাজ নিজে নিতে চাইলে খেয়াল রাখতে হয় কিছু ব্যাপার। এ সম্পর্কে পারসোনার বিউটি এক্সপার্ট কানিজ আলমাস খান বলেন, ‘যেহেতু গরমের মধ্যেই ভারি সাজ নিতে হবে, সেহেতু মেকআপ ওয়াটারপ্রুফ হওয়া ভালো, যা ঘামের চিন্তা থেকে মুক্তি দেয়। সেজন্য ব্যবহার করুন হালকা লিকুইড ফাউন্ডেশন, হালকা ফাউন্ডেশন। নিতে পারেন আইলাইনারও। এখন বড় অনুষ্ঠানের সাজেও খুব বেশি ভারি মেকআপ বেমানান।’ বৈশাখী উৎসব বা অনুষ্ঠানে চুল নিতে পারেন আয়রন করে। ভলিউম লেয়ার, লেয়ার কাটের মতো কাট হলে তা ছেড়েই যাওয়া যায়। অথবা চুল বেঁধে নিন কোনো ট্রেন্ডি স্টাইলে। তা হোক বিভিন্ন ফ্যাশনেবল বেণির মধ্যেই। এক্সেসরিজ নির্ভর করে সাজের সঙ্গে এবং নিজের পছন্দ, কমফোর্টনেসের মধ্যে। এ নিয়ে তিনি জানান, আপনার পোশাক, চেহারা, সাজের সঙ্গে মিলিয়ে আপনি কাঠের এক্সেসরিজ নিলেও সেটা দোষের কিছু না। শুধু মানায় কি-না তা খেয়াল রাখাই মুখ্য বিষয়। বৈশাখী উৎসবে সাজতে পারেন ফুল দিয়েও।’