আপু পঞ্চাশটা টাকা দেতো । – কি !! টাকা কি গাছে ধরে নাকি – তুইনা কাল টিউশনির টাকা পেলি, ঐখান থেকে দেনা আপু । – কানের কাছে ঘেনর ঘেনর করিস নাতো, ভাগ এখান থেকে – আমাকে টাকা দিলেই তো চলে যাই । আচ্ছা পঞ্চাশ টাকা না চল্লিশ টাকা দে । – ইস্ তোর জ্বালায় আর পারা গেল না । এই নে বিশ টাকা ভাগ এখন থেকে । মাত্র বিশ টাকা দিলি । ok সমস্যা নাই চটপটি এনে তোকে দেখিয়ে দেখিয়ে খাব । তখন কিন্তু আবার নজর দিস না – কি !! চটপটি খাবি তুই । এইনে আরো বিশ টাকা আমার জন্যে আনিস । মোট চল্লিশ টাকা নিয়ে আনোয়ার দরজার সামনে গিয়ে বলতে লাগলো । আমি কি তোর মত মেয়ে মানুষ নাকি যে চটপটি খাব । আমার টাকাটা দরকার ছিল তাই তোকে বোকা বানিয়ে নিয়ে গেলাম । তবেরে পাজি তোর একদিন কি আমার একদিন । খবরদার আমার টাকা দিয়ে যা, না হয় বাসায় ডুকতে দিব না।কে পায় আর আনোয়ার এর নাগাল । সে চমপট ।
আনোয়ার এর বড় বোন আইরিন । আনোয়ার যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই চটপটি রান্না করেছে কিন্তু খায়নি । মনস্থির করেছে আনোয়ার আসলে তাকে দিখিয়ে দেখিয়ে খাবে । একফোঁটাও দিবে না তাকে । রাত আটটায় বাড়ি ফিরেছে আনোয়ার । আনোয়ার ভেবে রেখেছে আপু অবশ্যই তাকে বকা দিবে কিন্তু না কোন টু শব্দ পর্যন্ত করলো না । আনোয়ার ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছে । কিছুক্ষণ পর আইরিন একটি প্লেটে করে কি যেন এনে খেতে শুরু করলো ।- কি খাস আপু – মধু খাই মধু । এই মধুর নাম চটপটি, খাবি….. – দেনা আপু একটু খাই ।- ভাগ এখান থেকে । বিকালে আমার থেকে চটপটির কথা বলে টাকা নিয়েছিস মনে আছে । এখন আমি খাই তুই চেয়ে চেয়ে দেখ । আনোয়ার গুমরা মুখে বসে আছে আর আইরিন চটপটি খাচ্ছে আর মিটমিট করে হাসছে ।- আনোয়ার . – বল – ফ্রিজে, প্লেটে চটপটিপ রাখা আছে নিয়ে খা । আবার না দিলে তো আমার পেট খারাপ হবে । মূহুর্তেই আনোয়ার চেহারা উজ্জ্বল হয়ে গেল । – লক্ষ্মী আপু আমার, এই কথা বলে চটপটি আনতে ফ্রিজের দিকে অগ্রসর হয় আনোয়ার ।
আজ আনোয়ারদের বাড়ি আলোক উজ্জ্বল । নিয়ন বাতি গুলো জ্বলছে আর নিভছে । আইরিন এর আজ বিয়ে । কিন্তু আনোয়ার এর বুক ফেটে কান্না পাচ্ছে । আপু চলে গেলে কার সাথে সে খুনসুটি করবে । কে তাকে চটপটি বানিয়ে খাওয়াবে । বিয়ে পরানো শেষ এখন বর যাত্রী আইরিন কে নিয়ে চলে যাবে কিন্তু আনোয়ার কিছুতেই মানতে পারছে না তার আপু আর এই বাড়িতে থাকবে না দুই ভাই বোন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে ।
আনোয়ার কথা দে ভাই একবার করে হলেও আমার সাথে ঐ বাড়িতে গিয়ে দেখা করবি । কথা দিলাম প্রতিদিন তোকে আমি চটপটি বানিয়ে খাওয়াবো, আনোয়ার এর মুখ দিয়ে কথা বের হয় না, শুধুই নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার আপুর দিকে । মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় । তার চোখের কোন বেয়ে অশ্রু ধারা নামে বোন উপস্হিত থাকায় সে বুঝতে পারেনি বোনের ভালোবাসাটা ।
আজ বোনের ভালোবাসাটা শুধুই স্মৃতি । সেই স্মৃতিতে হাতরিয়ে বোনের ভালোবাসাটা উপলব্ধি করে আনোয়ার ।
লেখক: Sultan Mahmud